বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা:উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের বিধ্বস্ত ঘটনায় দগ্ধ ও আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আরও একটি দল ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) রাত ১০টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তারা। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল তাদের স্বাগত জানায়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রখ্যাত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ‘সিং হেলথ’-এর সিনিয়র ডিরেক্টর বিজয়া রাও, পুন লাই কুয়ান এবং ম লিম ইউ হান জোভান এই মেডিকেল টিমের সদস্য।
এই তিন চিকিৎসক ঢাকায় অবস্থানকালে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন। ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, তারা শুধু চিকিৎসা পরামর্শই দেবেন না, বরং সরাসরি রোগীদের পর্যবেক্ষণ করবেন এবং চিকিৎসা প্রোটোকল মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে ঢাকায় এসে পৌঁছান সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. চং সি জ্যাক। বুধবার সকালেই তিনি জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন এবং আহত শিক্ষার্থীদের কেস–ভিত্তিক মূল্যায়ন করেন।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ দল আহত প্রত্যেক রোগীর অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রতি ঘণ্টায় রোগীদের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে—এমন বাস্তবতায় প্রতি ১২ ঘণ্টা পরপর চিকিৎসা পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশীয় চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তবে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ এই মুহূর্তে অত্যন্ত সহায়ক হয়ে উঠেছে। সিঙ্গাপুরের টিমের পরামর্শে আমরা আরও গভীর পর্যবেক্ষণে যাচ্ছি, যাতে প্রতিটি মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি।”
এদিকে বার্ন ইনস্টিটিউটজুড়ে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রতি শিফটে রোগীদের অবস্থা নিয়ে পৃথক রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। একাধিক অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত রাখা হয়েছে যেকোনো জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য।
ঘটনার পর থেকে যারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়াতে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং। প্রতিটি আইসিইউর সামনে অবস্থান করছেন স্বজনরা। অনেকেই এখনও নিজের সন্তানের মুখ দেখতে পারেননি।
এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট হচ্ছে—উত্তরার দুর্ঘটনায় কেবল জীবন নয়, দেশের চিকিৎসা কাঠামোও একটি কঠিন পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, দেশীয় উদ্যোগ আর মানবিক প্রতিজ্ঞায় গড়ে উঠছে এক সম্মিলিত লড়াই, যেখানে সময়ই সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।