Home Third Lead বার্ন ইনস্টিটিউটে চারদিন লড়ে হার মানল মাহতাব

বার্ন ইনস্টিটিউটে চারদিন লড়ে হার মানল মাহতাব

মাহতাব
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ঢাকার উত্তরায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হওয়া শিশু মাহতাব আহমেদ (১৪) চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেল। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১৩ মিনিটে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সপ্তম শ্রেণির এই কিশোর।

সামান্য বয়সেই জীবন সংগ্রামে হেরে যাওয়া মাহতাবের মৃত্যু মুহূর্তে হাসপাতালের করিডোর জুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়। স্বজনদের হৃদয়বিদারক আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ। দেখা গেছে, শিশুটির বাবা ইঞ্জিনিয়ার মিনহাজ দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কেউ কাউকে সান্ত্বনা দিতে পারছিল না। অসহায় সেই দৃশ্য দেখে আশপাশের রোগীর স্বজনরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

কুমিল্লার দেবিদ্বারের ছেলে মাহতাব রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। শ্রেণিতে ছিল তৃতীয় স্থান অধিকারী। পড়াশোনায় যত্নবান, স্বপ্ন দেখা এক কিশোর—যার জীবন শেষ হলো আগুনের ভয়াল গ্রাসে। দুর্ঘটনার পর নিজেই আগুনে পোড়া শরীর নিয়ে দৌড়ে সহায়তা চেয়েছিল, সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, কাঁদিয়েছে লক্ষ মানুষকে।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসের উদ্দিন জানান, “মাহতাব দুপুর ২টা ১৩ মিনিটে আমাদের ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে আইসিইউতে আরও ১০ জন ভর্তি রয়েছে।” ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক মারুফুল ইসলাম বলেন, “মাহতাবের প্রায় ৮৫ শতাংশ শরীর দগ্ধ ছিল। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। আমরা দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, বাকি শিশুদের যেন রক্ষা করতে পারি।”

মাহতাবের মামা জানান, “গতকাল থেকেই সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ বলে বেড়ায় আমার ভাগিনা মারা গেছে। সেটা তখন মিথ্যা ছিল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সত্যি সত্যি সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।”

চারপাশে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন—এত অল্প বয়সে, এমন নিষ্ঠুর মৃত্যু কেন? মাহতাবের পুড়ে যাওয়া শরীরের যন্ত্রণার চেয়ে বড় ছিল পরিবারের ভেঙে পড়া হৃদয়ের কান্না।

এই শিশুর মৃত্যু যেন কেবল একটি দুর্ঘটনার পরিসমাপ্তি নয়, বরং একটি পরিবারের ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের অন্তিম বিলাপ।