চীনের সঙ্গে নতুন চুক্তিতে পাকিস্তান শিপিং খাতে বিপ্লব
শিপিং ডেস্ক: পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং কর্পোরেশন (পিএনএসসি) আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের জাহাজ পরিবহন খাতে একটি বড় ধরনের রূপান্তরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে কর্পোরেশন ২৪টি নতুন জাহাজ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে ১০টি জাহাজ পরিচালনাকারী এই রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ৩৪টি জাহাজের মালিক হবে।
পিএনএসসির সময়সূচি অনুযায়ী, প্রথম বছরে ১৩টি, দ্বিতীয় বছরে ৮টি এবং তৃতীয় বছরে ৩টি জাহাজ সংগ্রহ করা হবে। বহর বৃদ্ধির ফলে বছরে আনুমানিক ৭০০ মিলিয়ন ডলারের মালামাল পরিবহন আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে কর্পোরেশন পাকিস্তানের সামগ্রিক পণ্য পরিবহনের মাত্র ১১ শতাংশ পরিচালনা করে; নতুন পরিকল্পনার লক্ষ্য আগামী তিন বছরে তা বাড়িয়ে ৫২ শতাংশে উন্নীত করা।
জাহাজ সংগ্রহ কার্যক্রমে দেশের করাচি শিপইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসকে যুক্ত করা হয়েছে। এখানেই প্রথমবারের মতো একটি কনটেইনার জাহাজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, যার ধারণক্ষমতা ২৬ হাজার টন, দৈর্ঘ্য ১৪৮ মিটার এবং গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৮ নট। এসব জাহাজে যুক্ত করা হচ্ছে আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি, যাতে মালামাল পরিবহন আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল হয়।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে পিএনএসসি পুরোনো আফ্রাম্যাক্স ট্যাংকারগুলো প্রতিস্থাপন করবে। এগুলোর বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর। নতুন ট্যাংকারগুলো হবে জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আন্তর্জাতিক নির্গমন মানদণ্ড-সম্মত। চলতি বছরের শেষ নাগাদ নতুন ট্যাংকার সংগ্রহের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।
এই বৃহৎ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য পিএনএসসি মূলত ঋণের ওপর নির্ভর করবে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ অর্থ ঋণ থেকে এবং বাকি ২০ শতাংশ নিজস্ব তহবিল কিংবা অংশীদারী বিনিয়োগ থেকে সংগ্রহ করা হবে। সরকার চায়, এতে বেসরকারি অংশীদার, আন্তর্জাতিক গ্রিন শিপিং তহবিল ও শিপ লিজিং ব্যবস্থাকে যুক্ত করা হোক, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমে।
এই প্রেক্ষাপটে, পিএনএসসি সম্প্রতি চীনের শানডং প্রদেশভিত্তিক শিনশু গ্রুপের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। ইসলামাবাদে আয়োজিত এ চুক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের মেরিটাইম বিষয়ক মন্ত্রী জুনায়েদ আনোয়ার চৌধুরী। তিনি জানান, “এই সহযোগিতা পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সমুদ্র পরিবহন খাতে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
এমওইউ অনুযায়ী, দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যৌথভাবে বা আলাদাভাবে তরল ও শুষ্ক বাল্ক কার্গো জাহাজ, কনটেইনার জাহাজ সংগ্রহ, মালিকানা ভাগাভাগি কিংবা লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতে পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে। শিনশু গ্রুপ পিএনএসসিকে সময়, স্পট বা বেয়ার বোট চাটার ব্যবস্থায় জাহাজ লিজ দিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া জাহাজ পরিচালনার প্রযুক্তিগত, বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায়ও সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
মেরিটাইম মন্ত্রী জানান, এই পরিকল্পনা সফল হলে পাকিস্তান প্রতিবছর অন্তত ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবে। একই সঙ্গে শিপিং খাতে কর্মসংস্থান বাড়বে, স্থানীয় প্রযুক্তি বিকশিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের বাণিজ্য সক্ষমতা ও স্বনির্ভরতা বাড়বে।
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি জাহাজের ওপর নির্ভরশীল পাকিস্তানের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্থানীয়ভাবে জাহাজ নির্মাণ ও পরিচালনার এই উদ্যোগ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তাদের ধারণা।