Home অন্যান্য কায়রোর পথে: নীল নদ ও এক বিকেলের তপ্ত বালি

কায়রোর পথে: নীল নদ ও এক বিকেলের তপ্ত বালি

ভ্রমণ কাহিনি: দেশ থেকে দেশে 

সাইয়েদ আহমেদ

নীল নদ, হাজার হাজার বছর ধরে আফ্রিকার বুকে বয়ে চলেছে নিরবধি। কায়রোর পথে হাঁটতে হাঁটতে আমি সেই নদীর কাছে এসে দাঁড়ালাম, যার তীরে জন্ম নিয়েছিল এক অমর সভ্যতা। এ নদী শুধু জল নয়, ইতিহাসের প্রাণ, সভ্যতার সাক্ষী। আর তার পাশে বিস্তীর্ণ সাহারা মরুভূমি, যেখানে তপ্ত বালুর ঢেউ সূর্যের তাপে ঝলসে উঠছে।

সেই বিকেলটা ছিল একেবারে আলাদা। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, গিজার পিরামিডের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমি অনুভব করলাম কালের কথা। বালুর উপরে সূর্যের লালাভ আলো ফুটছিল। বাতাসে যেন কালের ফিসফিস শব্দ ভেসে আসছিল—মা-বাবার, যোদ্ধার, প্রেমিকের কিংবা ভ্রমণকারীর চুপচাপ গোপন কথা। বালু আর নদী, দুই প্রাচীন উপাদান, যেন আমার কানে বলছিল একাকীত্ব আর অবিচল সাহসের গল্প।

নীল নদের ধীরে ধীরে বয়ে চলা, আর সাহারার তপ্ত বালির স্থিরতা—এই দুইয়ের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য থাকলেও, তারা একসাথে যেন সময়ের অমোঘ গতিকে বোঝায়। নদী অগ্রসর হয়, ইতিহাসের পাতায় পাতায় নতুন নতুন ছাপ ফেলে। বালি বদলায় না, তার উপর বরং সময়ের স্মৃতি জমে, কিছু পলাশ ঝরে যায়, আবার নতুন সূর্য ওঠে।

আমি হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম, এই নদী আর মরুভূমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে মানব সভ্যতার শুরু থেকে আজকের আধুনিকতায় এসে আমরা কতদূর এসেছি! কিন্তু এই নীরব বিকেল আমাকে বুঝিয়ে দিল, সময়ের কাছে আমরা সবাই অসহায়। নদী যেমন নিজেকে মুছে দেয় না, তেমনি বালুও তার ইতিহাস লুকায় না।

পাথরের পিরামিডগুলো, বালির ঢেউগুলো আর নদীর স্রোত—সবকিছু যেন এক সঙ্গে আমার ভেতরের অস্থিরতা আর শান্তিকে মিলিয়ে দিল। নীল নদ আর সাহারা আমাকে বলল, জীবনের অনেক গল্প ভাষায় বলা যায় না, কিছু অনুভবেই থেকে যায়। আর সেই অনুভবটাই হয়তো সবচেয়ে গভীর।

একাকী সেই বিকেলটাতে মনে হল, আমি সময়ের গহীনে হারিয়ে যাচ্ছি। আর কায়রোর বালিতে পড়ে থাকা সেই শব্দগুলো আজও আমার সঙ্গে গল্প করছে, নিঃশব্দে।