Home আন্তর্জাতিক লন্ডনে প্রিন্সেস ডায়ানার ‘কন্যা’ দাবি করে খুন করলেন বাড়িওয়ালা ও পোষা বিড়াল

লন্ডনে প্রিন্সেস ডায়ানার ‘কন্যা’ দাবি করে খুন করলেন বাড়িওয়ালা ও পোষা বিড়াল

হাবিবা নাভিদ
‘আমি যীশু, পৃথিবীর অশুভ নির্মূল করতে এসেছি’ — বিভ্রমগ্রস্ত নারীর বিভীষিকাময় হামলা
আজহার মুনিম, লন্ডন: লন্ডনের লুইসহ্যামে ৭২ বছর বয়সী এক আইনজীবীকে পিটিয়ে হত্যা এবং তার পোষা বিড়ালকে গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যার অভিযোগে এক নারীর বিরুদ্ধে আদালতে শুনানি হয়েছে। অভিযুক্ত ৩৫ বছর বয়সী হাবিবা নাভিদ নিজেকে যীশু খ্রিস্ট ও প্রিন্সেস ডায়ানার গোপন কন্যা বলে দাবি করেছিলেন।

নাভিদ শুরুতে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে মানস্লটারের অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন। পাশাপাশি তিনি তার বাড়িওয়ালা ক্রিস্টোফার ব্রাউনের পোষা বিড়াল ‘স্নো’কে অপ্রয়োজনীয় কষ্ট দিয়ে হত্যার দায়ও স্বীকার করেন।

পুরাতন বিচারালয়ে (ওল্ড বেইলি) বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত শুনানিতে বিচারক সারাহ মুনরো কেসি মানসিক স্বাস্থ্য আইনের ৩৭ ধারা অনুযায়ী তাকে হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ৪১ ধারা অনুযায়ী ‘রেস্ট্রিকশন অর্ডার’ জারি করেন, ফলে তিনি আর সাধারণ মুক্তির সুযোগ পাবেন না।

আদালতে বলা হয়, হাবিবা প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত এবং হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি “মনস্তাত্ত্বিক বিভ্রান্তি”-তে ভুগছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি তার ভাইকে বলেন, “আমি যীশু, আমি পৃথিবীর অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে এসেছি।” পুলিশকে তিনি বলেন, “গতরাতে শয়তান আমার উপর আক্রমণ করেছিল, আমি জিতেছি।”

নাভিদ আদালতে আরও দাবি করেন, তিনি কফিনে ঘুমান এবং যীশু তাকে মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছেন।

প্রসিকিউটর কেরি ব্রুম জানান, ঘটনার দিন রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে হাবিবা প্রথমে একটি সসপ্যান দিয়ে ব্রাউনের মাথায় আঘাত করেন, তারপর তার উপর বসে তার কয়েকটি পাঁজরের হাড় ভেঙে দেন এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

এরপর তিনি বিশ্বাস করেন যে, “অশুভ আত্মা” মৃত ব্রাউনের শরীর থেকে বিড়ালের মধ্যে ঢুকেছে, তাই একটি ছুরি দিয়ে বিড়ালটির গলা কেটে দেন।

দীর্ঘদিন একসঙ্গে বসবাস করতেন ব্রাউন ও হাবিবা। এমনকি তিনি ব্রাউনকে প্ররোচিত করে বাড়ির মালিকানায় নিজের নামও অন্তর্ভুক্ত করান। তিনি ঘর সংস্কার করে তাতে ভাড়াটিয়া আনার দায়িত্বও পালন করতেন।

ঘটনার কয়েকদিন আগে হাবিবার পরিবারের সদস্যরা তার মানসিক অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে ১১১ নম্বরে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখা যায়, ব্রাউনের মৃত্যুর কারণ ছিল মাথায় প্রচণ্ড আঘাত। আদালতে তার সহকর্মী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “তিনি শুধু একজন ৭২ বছরের মানুষ ছিলেন না, ছিলেন একজন সদয়, উদার আইনজীবী ও পথপ্রদর্শক।”

তার এক চাচাতো ভাই বলেন, “ব্রাউন ছিলেন এক সহানুভূতিশীল মানুষ, যিনি পরিবার ও ক্লায়েন্টদের সবসময় সাহায্য করতেন।”

আদালতে বলা হয়, নাভিদের মানসিক রোগ পূর্ব থেকেই ছিল এবং ঘটনার সময় তিনি ওষুধ থেকে দূরে ছিলেন। গাঁজার ব্যবহার তার লক্ষণগুলো আরও প্রকট করে তোলে, যদিও এটি তার রোগের মূল কারণ নয়।