হেলথ ডেস্ক:
ডায়াবেটিস এখন ঘরে ঘরে পরিচিত একটি অসুখ। বয়স না দেখেই আক্রমণ করে এই ‘সাইলেন্ট কিলার’। উপসর্গ প্রায় নেই বললেই চলে, তাই অনেকেই সময় থাকতে বুঝে উঠতে পারেন না বিপদ কতটা গভীর। পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট ডায়াবেটোলজিস্ট ড. কল্যাণকুমার গঙ্গোপাধ্যায় এই রোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানিয়েছেন।
কী এই ডায়াবেটিস?
রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা শরীরে নানা সমস্যা তৈরি করে, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিস। এটি মূলত শরীরের ইনসুলিন হরমোনের অপ্রতুলতা বা অকার্যকারিতার ফল। অনেক সময় এটি বংশগত, আবার অনেক সময় জীবনযাত্রার কারণে দেখা দেয়।
কেন বলা হয় সাইলেন্ট কিলার?
ডায়াবেটিসে অনেক সময় শরীরে তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। কোনও পরীক্ষার সময় হঠাৎ করেই ধরা পড়ে। তাই চিকিৎসকেরা একে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলে অভিহিত করেন। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত শর্করার মাত্রা চোখ, কিডনি, স্নায়ু ও হৃদপিণ্ডে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
ডায়াবেটিসের ধরণ
🔸 টাইপ-১ ডায়াবেটিস: এটি শিশু ও কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। প্যানক্রিয়াস হঠাৎ ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এতে দ্রুত ওষুধ এবং ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
🔸 টাইপ-২ ডায়াবেটিস: সাধারণত ৩০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। অতিরিক্ত ওজন এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাই প্রধান কারণ।
🔸 জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস: গর্ভাবস্থায় দেখা দেয় এই ধরণ। এতে গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সমস্যা হতে পারে।

লক্ষণগুলো কী?
প্রথমদিকে কোনও উপসর্গ নাও থাকতে পারে। তবে অনেক সময় বেশি প্রস্রাব, অতিরিক্ত জল খাওয়ার প্রবণতা, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
ডায়াবেটিস হলে কী খাওয়া উচিত?
✔ চিনি ও মিষ্টি বাদ দিতে হবে
✔ ভাত-রুটি কম খেতে হবে
✔ সবজি, ডাল, মাছ ও অল্প পরিমাণ ফল খাওয়া যাবে
✔ আম ও কলা খেলেও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
✔ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
অস্ত্রোপচারে সমস্যা হয়?
অনেকেই ভাবেন ডায়াবেটিস থাকলে অপারেশন করা যায় না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব এবং নিরাপদ।
গর্ভাবস্থায় করণীয়
২৪ সপ্তাহের মাথায় গর্ভবতী নারীদের গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করানো জরুরি। রিপোর্ট পজিটিভ এলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তাতে শিশু এবং মায়ের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়।
ডায়াবেটিস কোনও অবহেলার রোগ নয়। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, সচেতন জীবনযাপন, সুষম খাদ্য এবং চিকিৎসকের পরামর্শে থাকা ছাড়া এই রোগের হাত থেকে বাঁচা কঠিন। সময় থাকতেই সতর্ক হন।