Home স্বাস্থ্য ডেঙ্গুর ছায়ায় চিকুনগুনিয়া : পাঁচশো ষাট কোটি মানুষ ঝুঁকিতে

ডেঙ্গুর ছায়ায় চিকুনগুনিয়া : পাঁচশো ষাট কোটি মানুষ ঝুঁকিতে

হেলথ ডেস্ক: ডেঙ্গু নিয়ে এখন উদ্বেগের শেষ নেই। বর্ষা এলেই শহর ও গ্রামের আনাচে কানাচে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মশাবাহিত এই রোগ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে বলেই সাধারণ মানুষ থেকে চিকিৎসক মহল—সবাই বাড়তি সতর্ক থাকেন। কিন্তু এই ডেঙ্গু আতঙ্কের আড়ালেই নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে আরও একটি বিপজ্জনক ভাইরাসঘটিত রোগ, যার নাম চিকুনগুনিয়া। যদিও এটি ডেঙ্গুর মতো প্রাণঘাতী নয়, তবে একবার সংক্রমণ হলে শরীরে যন্ত্রণা ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা রেখে যায় বহু মাস পর্যন্ত।

চিকুনগুনিয়া নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক সতর্কবার্তায়। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই ভাইরাস ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং বিশ্বজুড়ে পাঁচশো ষাট কোটি মানুষ রয়েছে ঝুঁকিতে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও মশাবহুল দেশে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে। ফলে এখনই প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

চিকুনগুনিয়া প্রথম শনাক্ত হয়েছিল আফ্রিকায়। স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবোপিক্টাস মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ভাইরাসটি শরীরে ঢুকলেই প্রথমে দেখা দেয় জ্বর, র‌্যাশ, গা হাত পা ভাঙা ব্যথা। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর যেটি, তা হল জ্বর চলে যাওয়ার বহুদিন পরেও শরীরের গাঁটে গাঁটে অসহ্য যন্ত্রণা থেকে যাওয়া। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এই ব্যথা দেড় থেকে দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অনেকে একে বলেন ‘অস্থিসন্ধির জ্বর’। হাড়ে-মাংসে যন্ত্রণা এমন মাত্রায় পৌঁছায় যে স্বাভাবিক জীবনযাপনও ব্যাহত হয়।

চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গুর পরীক্ষা করিয়ে ফল নেগেটিভ আসলে অনেকেই নিশ্চিত হন যে ভয় নেই। কিন্তু সেখানেই ঘটছে বড় ভুল। কারণ, ডেঙ্গু নয়—রোগীর শরীরে তখন বাসা বেঁধেছে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস। সঠিক পরীক্ষার অভাবে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হচ্ছে এবং উপসর্গ তীব্র আকার ধারণ করছে।

চিকুনগুনিয়া দমনেও নেই কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ বা প্রতিষেধক। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসাই একমাত্র উপায়। রোগ প্রতিরোধের জন্য চাই সচেতনতা, বিশেষ করে মশা থেকে নিজেকে রক্ষা করা। মশারির ব্যবহার, জমে থাকা পানিতে লার্ভা গঠনের সুযোগ না দেওয়া এবং নিজ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা—এই তিনটি কাজই সবচেয়ে জরুরি। এছাড়া জ্বর দেখা দিলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার, যাতে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়।

বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে বর্ষা এলেই ডেঙ্গুর পাশাপাশি বাড়ছে চিকুনগুনিয়ার রোগী। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এর মধ্যে অনেকেই চিকুনগুনিয়াকে সাধারণ জ্বর মনে করে অবহেলা করেন। যার পরিণাম হয় দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ভোগান্তি। তাই সময় থাকতে সঠিক পরীক্ষা, সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাই হতে পারে এই ভাইরাস থেকে বাঁচার প্রধান উপায়।

স্বাস্থ্যসংক্রান্ত আরও প্রতিবেদন জানতে ভিজিট করুন businesstoday24.com