আমি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা, আর ভয় পাচ্ছি প্রসব নিয়ে—প্রতিটি মায়ের যা জানা দরকার
অনুবাদ: Boudicca Fox-Leonard-এর একটি ব্যক্তিগত ও অনুসন্ধানভিত্তিক প্রতিবেদন অবলম্বনে
হেলথ ডেস্ক: ১৯২৮ সালে আমার প্রপিতামহী, বার্থা, সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর সেপটিসেমিয়া (puerperal fever)-তে মারা যান। তাঁর বয়স তখন মাত্র ৩২। সদ্যোজাত কন্যাশিশুটিও বাঁচেনি। আমার দাদি, তখন দুই বছরের, বড় হন তাঁর খালার কাছে।
সেই বছরই আবিষ্কৃত হয় পেনিসিলিন। এরপর শুরু হয় প্রসূতিসেবা ও মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষার এক নতুন যুগ। মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
আমার জন্ম ১৯৮৪ সালে। মা-ও postpartum ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু চিকিৎসা ছিল তখন অনেক উন্নত।
তবুও প্রসব আজও এক জটিল, ভীতিকর এবং প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা। যন্ত্রণা হবে, শারীরিক পরিবর্তন আসবে—এটা সবাই জানে। কিন্তু আজকের প্রসূতিরা আরেকধরনের ভয়ের মুখোমুখি—যে যত্নটি পাওয়ার কথা, সেটা আদৌ পাবেন তো?
যুক্তরাজ্যে এনএইচএস-এর মাতৃসেবা বর্তমানে ব্যাপক জনবল সংকটে ভুগছে। ২০২৪ সালের এক গবেষণা জানায়, গর্ভাবস্থায় কিংবা পরে মৃত্যু হওয়া নারীর সংখ্যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
গত বছর এনএইচএস-এর ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া মোট টাকার ৪১ শতাংশই গিয়েছে মাতৃসেবা সংক্রান্ত অভিযোগে—মোট পরিমাণ ছিল ১.১৫ বিলিয়ন পাউন্ড।
এই বাস্তবতায়, আমি যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন আমার ভয় প্রসবের চেয়ে অনেক বেশি ‘অসুস্থ মাতৃসেবা’ নিয়ে।
বন্ধু, আত্মীয়, পরিচিতদের কাছ থেকে অহরহ শোনা যাচ্ছে—দ্রুত ব্যথানাশক না দেওয়া, প্রসবের সময় অমর্যাদাকর ব্যবহার, সন্তান দুধ না খেলে মায়ের উপর দোষ চাপানো—এগুলোই যেন এখন নিয়মে পরিণত।
তাহলে কী করব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করাই হতে পারে আপনার সুরক্ষার চাবিকাঠি। তাই, NHS-এ প্রসবের আগে আপনার মিডওয়াইফকে জিজ্ঞাসা করুন এই প্রশ্নগুলো:
১. কোন লক্ষণ দেখলে আমি দ্রুত হাসপাতালে যাব?
- হঠাৎ রক্তপাত
- গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া বন্ধ
- পানি ভেঙে যাওয়া
- মিডওয়াইফ ডার্সি ক্রফট বলেন: “মহিলারা অনেক সময় চিন্তা করেন তাঁরা যেন বাড়তি চাপ না তৈরি করেন। কিন্তু সুরক্ষার জন্য জোর দিয়ে বলতে হবে—‘আমি উদ্বিগ্ন, দয়া করে আমাকে দেখে নিন’। নারীরা প্রশ্ন করলে তাদের পরিণতি সাধারণত নিরাপদ হয়।”
২. আমি কি পরিকল্পিত সিজারিয়ান (C-section) চাইতে পারি?
- হ্যাঁ। মেডিক্যাল বা মানসিক কারণে কেউ চাইলে সিজারিয়ান চেয়ে নিতে পারেন।
- যেমন—আপনার বয়স যদি ৪০-এর ওপরে হয়, তাহলে জরুরি সিজারিয়ানের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এমনকি ডেলিভারি ভালো হলেও, অনেকে নিরাপত্তার জন্য পরিকল্পিত সিজারিয়ান বেছে নেন।
৩. আমি কি বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতে পারি?
- কম ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা হলে হোম বার্থ (home birth) নিরাপদ। কিন্তু কোনো জটিলতা থাকলে তা হাসপাতালে করাই শ্রেয়।
৪. প্রসবকালে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমি কীভাবে জড়িত থাকতে পারব?
- প্রসব যন্ত্রণার মধ্যেও একজন মা যেন জানেন—তিনি কী করতে যাচ্ছেন, কেন করছেন, এবং তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
- আপনার কথা শুনছে না মনে হলে সমন্বয়কারীকে ডাকতে বলুন। জন্মসাথী বা পরিবারের কাউকে সঙ্গে রাখুন—এতে নিরাপদ বোধ করবেন।
৫. আমার জন্ম পরিকল্পনা (birth plan) কি মানা হবে?
- হয়তো পুরোটা হবে না, কিন্তু স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত পয়েন্ট আকারে লেখলে তা পড়া ও বোঝা সহজ হবে। এক বা দুইটি “না বদলানো যাবে না” এমন শর্ত যুক্ত করুন।
৬. কোনো জটিলতা হলে কি সিনিয়র ডাক্তার থাকবেন?
- হ্যাঁ। প্রতিটি হাসপাতালে কনসালটেন্ট বা সিনিয়র ডাক্তার উপস্থিত থাকেন বা কলের অপেক্ষায় থাকেন। তবে মিডওয়াইফ-চালিত ইউনিটে থাকলে আপনাকে অন্য ইউনিটে স্থানান্তর করা হতে পারে।
৭. ব্যথানাশক ওষুধ যদি পরে চাই?
- ড. ক্লারা ডোরান বলেন: “যখনই লাগবে, বলুন। শুরুতে না চাইলেও পরে চাইতে পারেন। আপনার শরীরের কথা শুনুন, এখানে কেউ আপনাকে নম্বর দিচ্ছে না।”
৮. প্রসবের পর সংক্রমণ বা সেপসিসের লক্ষণ কী?
- জ্বর, দুর্বলতা
- গায়ে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট
- বুক ধড়ফড় করা
- মিডওয়াইফ বলেন: “খারাপ লাগলে জোর দিন, ‘আমি খুব অসুস্থ বোধ করছি’। প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা চেয়ে নিন।”
- ৯. প্রসব-পরবর্তী ওয়ার্ডে কী পাব?
আপনি খুবই ক্লান্ত, কিন্তু হয়তো পাঁচজন মায়ের সঙ্গে একটি ওয়ার্ডে থাকতে হবে। তাই সুস্থ হলেই বাড়ি ফিরুন।
সিজারিয়ান হলে ৪–৬ ঘণ্টার মধ্যে হাঁটার চেষ্টা করুন। তাড়াতাড়ি না হাঁটলে ব্যথা বেড়ে যায়।
- ১০. সন্তান জন্মের পর মন খারাপ বা উদ্বিগ্ন হলে কাকে বলব?
এটা সাধারণ বিষয়। মনে রাখবেন—আপনি কেবল মা হননি, নতুন জীবন শুরু করেছেন। জিপি, মিডওয়াইফ বা হেলথ ভিজিটরের সাহায্য নিন।
দুধ খাওয়াতে সমস্যা হলে আত্মগ্লানিতে না ভুগে সমাধান খুঁজুন। প্রয়োজন হলে ফর্মুলা দুধ ব্যবহার করুন।
ড. ডোরান বলেন: “যা আপনার ও সন্তানের জন্য ঠিক, সেটাই সঠিক।”
শেষ কথা
এই সময়টা আনন্দের, কিন্তু একইসঙ্গে ভয়েরও। নিজেকে সময় দিন, নিজের অনুভবকে গুরুত্ব দিন। মা হিসেবে আপনার যাত্রা এখান থেকেই শুরু।
- 👉 আরও মাতৃসেবা সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেতে চোখ রাখুন: www.businesstoday24.com