Home অন্যান্য আপনার বাচ্চা মোটা হচ্ছে, আপনি কী করবেন

আপনার বাচ্চা মোটা হচ্ছে, আপনি কী করবেন

শিশুর ওজন বাড়ছে, স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক

হেলথ ডেস্ক: ছোটবেলার গোলগাল বাচ্চা মানেই সুস্থ ও হৃষ্টপুষ্ট, এমন একটি ধারণা আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। কিন্তু সময় বদলেছে। শিশুদের অতিরিক্ত ওজন এখন আর নিরীহ কোনো সৌন্দর্যের প্রতীক নয়। বরং চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, এই গোলগাল চেহারার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে বহু শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি।

প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে, আপনার সন্তানের ওজন কি তার বয়সের তুলনায় স্বাভাবিক রয়েছে নাকি তা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। শুধু চেহারার দিকে তাকিয়ে এর উত্তর বের করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার সুনির্দিষ্ট পরিমাপক। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাপকাঠির কথা উঠে আসে, তা হলো বডি মাস ইনডেক্স।

বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই কীভাবে বোঝা যায়

বিএমআই হলো শরীরের ওজন ও উচ্চতার অনুপাতের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যগত অবস্থা নির্ণয়ের একটি বৈজ্ঞানিক উপায়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্দিষ্ট মান নির্ধারিত থাকলেও শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স অনুসারে বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। এটিকে বলা হয় পারসেন্টাইল স্কেল। ধরুন, আপনার সন্তানের বয়স আট বছর এবং তার বিএমআই যদি বয়সভিত্তিক ৮৫তম পারসেন্টাইল অতিক্রম করে, তাহলে ধরে নেওয়া হয় সে অতিরিক্ত ওজনে রয়েছে। আর যদি ৯৫তম পারসেন্টাইলের ওপরে যায়, সেটি স্থূলতার পর্যায়ে পড়ে।

সব মোটা বাচ্চাই কি স্থূলতায় আক্রান্ত

সব সময় নয়। অনেক সময় বাচ্চারা হৃষ্টপুষ্ট হলেও তারা স্বাভাবিক গতিশীলতায় থাকে। তবে কিছু লক্ষণ আছে যেগুলোর উপস্থিতি চিন্তার বিষয় হতে পারে। যেমন সন্তানের হাঁটতে গেলে হাঁপিয়ে যাওয়া, খেলাধুলায় অনাগ্রহ, সারাক্ষণ বসে থাকতে চাওয়া কিংবা ওজন নিয়ে সহপাঠীদের কটূ মন্তব্যে কষ্ট পাওয়া। এমন লক্ষণ দেখা দিলে বাবা-মাকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

বাবা-মা কী করবেন

প্রথমেই আত্মপ্রবঞ্চনা বাদ দিয়ে পরিস্থিতি স্বীকার করতে হবে। শিশুকে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া বা তাকে তিরস্কার করে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং বয়স অনুযায়ী উচ্চতা ও ওজন পর্যবেক্ষণ করে গ্রোথ চার্টের মাধ্যমে একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। এতে করে বোঝা যাবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি কি না।

এ ছাড়া অভ্যাস গঠনের ক্ষেত্রেও পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, দিনে অন্তত এক ঘণ্টা সক্রিয় খেলাধুলা এবং পর্দার (মোবাইল বা টিভি) সময় নিয়ন্ত্রণে রাখলে অনেকাংশেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

স্মরণে রাখতে হবে, শিশুর অতিরিক্ত ওজনের জন্য শুধু খাবার নয়, বরং জেনেটিক কারণ, জীবনযাপন পদ্ধতি, মানসিক চাপ, এমনকি পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবও দায়ী হতে পারে।

সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে কী ঝুঁকি হতে পারে

শিশু অবস্থায় স্থূলতা থাকলে বড় হয়ে টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকি এবং হাড়ের সমস্যাসহ নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি আত্মবিশ্বাস হ্রাস এবং হতাশাও দীর্ঘমেয়াদি মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আগেভাগে সচেতনতা জরুরি।

📌 আপনার সন্তান মোটা হচ্ছে ভেবে ভয় নয়, এখনই সচেতনতা জরুরি। এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন—আরও বাবা-মা যেন বুঝতে পারেন, কখন চিকিৎসা প্রয়োজন আর কখন নয়।

🗨️ কমেন্ট করুন:
আপনার সন্তানের ওজন নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী? জানাতে ভুলবেন না নিচে।