আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিরোধী কণ্ঠ ও গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলোকে দমন করতে নতুন আইন এবং নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। নির্বাচনে ‘বাধা সৃষ্টির’ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রেখে মঙ্গলবার জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এক নতুন আইন জারি করেছেন। থাইল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতির তথ্যমতে, এই আইন মূলত জনসাধারণকে ভয় দেখানো এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দমনের একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
আইনে বলা হয়েছে নির্বাচন ব্যাহত করলে ৩ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড, ব্যালট বাক্স বা ভোটকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত করলে ৫ থেকে ১০ বছর, দলবদ্ধভাবে করলে যাবজ্জীবন এবং গুরুতর সহিংসতায় কেউ মারা গেলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শকও থাকবেন।
এদিকে, ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মিয়ানমার সরকার তিন বছর আগে জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার গঠন করা হয়েছে ১১ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন, যার প্রধান থাকবেন স্বয়ং মিন অং হ্লাইং। ২০২১ সালে অং সান সুচির সরকার হটিয়ে সেনাবাহিনী যে অভ্যুত্থান ঘটায়, তখন থেকেই দেশে জরুরি অবস্থা চলছিল। জান্তার দাবি এখন ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে’ এগোতেই তারা ভোট আয়োজন করছে।
তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। দেশটির বেশির ভাগ অঞ্চলেই গৃহযুদ্ধ ও সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। সেনা সরকারের নিয়ন্ত্রণ ৩৩০টি টাউনশিপের মধ্যে মাত্র ২৬৭টিতে আছে বলে দাবি করা হলেও বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সেনা পাহারায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
সেনানিয়ন্ত্রিত ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন এলাকায় সেনা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হত্যার শিকার হচ্ছেন, যা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। উত্তর শান রাজ্যের ওয়াদের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখনও ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন (ইইসি) থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।
পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো, বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জান্তার নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, এটি একটি সামরিক শাসনের বৈধতা দিতে সাজানো নির্বাচন। অন্যদিকে চীন, ভারত, রাশিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও বেলারুশ জান্তার এই পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে।
অন্যদিকে, মালয়েশিয়া বর্তমানে আসিয়ানের চেয়ার বলেছে, মিয়ানমারে যত দিন সহিংসতা চলবে, তত দিন কোনো বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান আইন ও প্রস্তুতি ২০০৮ সালে জান্তা নেতা থান শ্বে’র আনা বিতর্কিত আইনের অনুরূপ। সে সময় মত প্রকাশে ২০ বছরের জেল ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি, এবার মিন অং হ্লাইং সেই সীমা বাড়িয়ে দিয়েছেন মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত।