Home রেমিটেন্স যোদ্ধাদের খবর কানাডায় পা রেখে নতুন স্বপ্নে পথচলা: কোথায় আছেন বাংলাদেশের মানুষ

কানাডায় পা রেখে নতুন স্বপ্নে পথচলা: কোথায় আছেন বাংলাদেশের মানুষ

শারমিন মাহমুদ, টরন্টো: কানাডা এখন অনেক বাংলাদেশির জন্য নতুন জীবনের স্বপ্নের দেশ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার কিছু আগে থেকেই এই উত্তর আমেরিকার দেশে পা রাখেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ। তবে প্রকৃত অভিবাসন শুরু হয় স্বাধীনতার পরপরই, আর বড় পরিসরে বাংলাদেশিদের বসতি গড়ে ওঠে আশির দশকে। তখন থেকেই মূলত টরন্টোকে ঘিরেই বাংলাদেশের মানুষের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।

বর্তমানে কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে প্রায় এক লক্ষ থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। সরকারি হিসেবে ২০২১ সালের জনশুমারিতে এই সংখ্যা প্রায় পঁচাত্তর হাজার হলেও স্থানীয় বাংলাদেশি সংগঠন ও গবেষকদের মতে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আছেন টরন্টো শহর ও তার আশপাশের এলাকায়। গ্রেটার টরন্টো অঞ্চলে প্রায় ৬৫ হাজারের মতো মানুষ আছেন যারা বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত। টরন্টোর স্কারবরো, ড্যানফোর্থ অ্যাভিনিউ, ক্রেসেন্ট টাউন ও রিজেন্ট পার্ক এলাকায় বাংলাদেশিদের ঘনবসতি লক্ষ্য করা যায়। ২০২৩ সালে ড্যানফোর্থের একটি অংশকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলা টাউন’ নামে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এর বাইরে মন্ট্রিয়াল, ক্যালগারি, ভ্যাঙ্কুভার, ওটাওয়া ও উইনিপেগ শহরেও বাংলাদেশিদের উপস্থিতি বেড়েছে। মন্ট্রিয়ালের পার্ক এক্সটেনশন ও প্লামনডন এলাকায় বসবাস করছেন প্রায় দশ হাজার বাংলাদেশি।

কানাডায় বাংলাদেশিরা মূলত শিক্ষিত পেশাজীবী হিসেবেই অভিবাসন শুরু করেছিলেন। ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক কিংবা প্রশাসনিক পেশাজীবীরা এখানকার কর্মক্ষেত্রে জায়গা করে নিতে শুরু করেন আশির দশক থেকে। তবে অনেকেই প্রথম দিকে নিজ যোগ্যতার কাজ না পেয়ে সাধারণ কাজ করে জীবন শুরু করেছেন।

বর্তমানে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশিরা শিক্ষা, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও ব্যবসা ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। অনেকেই উদ্যোগী হয়ে রেস্তোরাঁ, মুদি দোকান, মানি এক্সচেঞ্জ কিংবা পরিবহন খাতেও কাজ করছেন। একই সঙ্গে প্রবাসে বেড়ে ওঠা সন্তানেরাও নিজেদের পরিচয় ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত রাখতে নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।

তবে অভিবাসনের পথ কখনোই মসৃণ ছিল না। কানাডায় এসে ভাষা সমস্যা, বিদেশি সনদের স্বীকৃতি না পাওয়া, পেশা পরিবর্তনের বাধ্যবাধকতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বঞ্চনা অনেককেই শুরুতে হতাশ করেছে। তা সত্ত্বেও প্রবাসের বাংলাদেশিরা একে অন্যকে সহযোগিতা করে গড়ে তুলেছেন শক্ত এক কমিউনিটি।

টরন্টোতে গড়ে উঠেছে মসজিদ, বাংলা স্কুল, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং উৎসবমুখর সামাজিক অনুষ্ঠান। একুশে ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ কিংবা স্বাধীনতা দিবসে প্রবাসেও বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার আবহ তৈরি হয়।

বাংলাদেশিদের কানাডায় বসবাস শুধু সংখ্যা নয়, গুণগত পরিবর্তনেরও প্রতিচ্ছবি। তারা এখন কেবল শ্রমজীবী বা শিক্ষার্থী নন, বরং পেশাজীবী, রাজনীতিক ও সমাজ নেতৃত্বেও প্রবেশ করেছেন। তাদের এই অগ্রগতি নতুন প্রজন্মকে আশাবাদী করে তোলে।