Home পর্যটন জাপানের চেরি ফুলের ছায়ায় নীরবতার গান

জাপানের চেরি ফুলের ছায়ায় নীরবতার গান

ভ্রমণ কাহিনী: দেশ থেকে দেশে 

সাইয়েদ আহমেদ
বসন্ত এলে জাপানের পুরো দেশ যেন একরাশ রূপের আবরণে মুড়ে ফেলা হয়। চারদিকে চেরি ফুলের মায়াবী ছোঁয়া, হালকা গোলাপী আর সাদা পাপড়ির সমারোহ। নদীর ধারে গাছেদের নিচে বসে থাকা মানুষজনের মুখে ঝলমলে এক শান্তি। এ যেন প্রকৃতির কাছে গভীর শ্রদ্ধার এক নীরব গান, যা কেবল বোঝে সে যার হৃদয় শুনতে জানে।

আমি যখন কিয়োটোর ছোট একটি গ্রামে পৌঁছলাম, তখন বসন্ত ফুলের মৌসুম। পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে চোখ পড়ল চেরি গাছের সারিতে, যা নদীর ধারে একটি প্রশস্ত পার্কের অংশ। সেখানকার নদী অতি স্নিগ্ধ, তার জলের ধারে ফুটছে সেই গোলাপি ফুলের ছায়া। নীরব বাতাসে লেগে থাকে পাপড়ির মৃদু নাচ। যেন তারা ছড়িয়ে পড়ছে নদীর জলে, এক এক করে ভেসে যাচ্ছে দূরে।

গ্রামের মানুষজন খুবই সরল, নিরিবিলি জীবন যাপন করে। সেদিন আমি নদীর পাড়ে বসেছিলাম, পাশে এক বৃদ্ধাকে দেখে। তিনি আস্তে আস্তে চা বানাচ্ছিলেন, আর তার পাশে ছোট একটি বাচ্চা মেয়ে নীরবে ফুল তুলছিল। তাদের মধ্যকার আন্তরিকতা, ভাষাহীন ভালোবাসার প্রকাশ, আমার মনে গভীর ছাপ ফেলল।

বৃদ্ধা বললেন, “জীবন আমাদের অনেক কথাই বলে না, কিন্তু প্রকৃতির এই ছোঁয়ায় সব কিছু প্রকাশ পায়। চেরি ফুল যেমন এক সুন্দর কিন্তু ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি, তেমনি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত।”

আমি তখন বুঝতে পারলাম, জাপানের মানুষ প্রকৃতিকে শুধু আলিঙ্গন করে না, সে তাদের জীবনের অঙ্গ। বসন্তের এই ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য যেমন তাদের মনে এক অমর আশা জাগায়, তেমনি তাদের জীবনের দ্রুত পরিবর্তনশীলতা বুঝিয়ে দেয়।

নদীর নীরব স্রোতে, ফুলের মৃদু নাচে, আর গ্রামের সাদামাটা মানুষের হাসিতে আমি হারিয়ে গেলাম। হারিয়ে গেলাম এক শান্তির মধ্যে, যা বলে, জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে সবচেয়ে বড় আনন্দ।

এই যাত্রায় শিখেছি, সত্যিকারের নীরবতা কখনো নিরব নয়। এটা হৃদয়ের গভীর স্পন্দন, যা আমাদের প্রকৃতির সঙ্গেই মিলিয়ে দেয়।

আপনারাও যদি কখনো জীবনের গভীর শান্তি খুঁজতে চান, বসন্তের এই নীরবতায় হারাতে চান, তবে জাপানের চেরি ফুলের ঘেরা নদীর ধারে একবার হলেও যান। সেখানকার প্রতিটি শাখা, প্রতিটি পাপড়ি যেন আপনাকে ভালোবাসার এক নরম কাব্য শেখায়।