বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর ফার্মেসি বিভাগ এবং এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামের যৌথ উদ্যোগে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫০২ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ফার্মেসি বিভাগের প্রধান আইরিন সুলতানা। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হাসপাতাল, চট্টগ্রামের কনসালটেন্ট ডা. হাসনিনা আক্তার।
সেমিনারে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে অংশগ্রহণ করেন। ডা. হাসনিনা আক্তার ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ, নির্ণয় এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “যত দ্রুত রোগটি শনাক্ত করা যায়, তত বেশি সম্ভব তা নিয়ন্ত্রণ করা।” তার বক্তব্যে সচেতনতা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিয়মিত চেকআপের গুরুত্ব বিশেষভাবে উঠে আসে।
আইরিন সুলতানা বলেন, “ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়াই এ সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
ব্রেস্ট ক্যান্সার কী?
ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার হলো স্তনের কোষে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্ট একধরনের মারণ রোগ। এই কোষগুলো টিউমার তৈরি করে এবং সেখান থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রাথমিক লক্ষণ কী?
- স্তনে গিঁট বা শক্ত অংশ অনুভব করা
- স্তনের আকার বা গঠন পরিবর্তন হওয়া
- স্তনের ত্বকে গর্ত বা কুঁচকে যাওয়া
- স্তনের বা বগলের চামড়া লাল বা ফোলা হয়ে যাওয়া
- নিপল থেকে অস্বাভাবিক রস নিঃসরণ
- নিপল ভিতরে ঢুকে যাওয়া
এই লক্ষণগুলো থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
নির্ণয়ের উপায়
ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য কিছু সাধারণ পদ্ধতি হলো:
- ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন (চিকিৎসকের মাধ্যমে চেকআপ)
- ম্যামোগ্রাম (স্তনের এক্স-রে)
- আল্ট্রাসনোগ্রাফি
- বায়োপসি (টিস্যু সংগ্রহ করে ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া)
প্রতিরোধের উপায়
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- স্বাস্থ্যকর জীবনধারা (সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা)
- স্তন নিজে নিজে পর্যবেক্ষণ করা
- নির্দিষ্ট বয়সের পর নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করানো
- পারিবারিক ইতিহাস থাকলে বাড়তি সতর্কতা
বিশ্ব এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ২০ লাখ নারী নতুন করে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মৃত্যুর হারও উদ্বেগজনক। উন্নত দেশগুলোতে সচেতনতা ও চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে বেঁচে যাওয়ার হার অনেক বেশি।
বাংলাদেশে ব্রেস্ট ক্যান্সার নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী এই রোগে আক্রান্ত হন। সচেতনতার অভাব, দেরিতে শনাক্ত হওয়া এবং চিকিৎসা খরচ বহন করতে না পারার কারণে অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারেন না।
সেমিনারের মাধ্যমে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি এবং এভারকেয়ার হাসপাতালের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। এধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে অনেক জীবন রক্ষা করা সম্ভব।