Home অন্যান্য শিল্পবর্জ্যে দুষিত চট্টগ্রামের ড্রেন: প্রশাসনের চোখে অদৃশ্য এক বিষধারা

শিল্পবর্জ্যে দুষিত চট্টগ্রামের ড্রেন: প্রশাসনের চোখে অদৃশ্য এক বিষধারা

বায়েজিদ  এলাকার ড্রেনে সরাসরি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে রাসায়নিক বর্জ্য; গাঢ় কালো তরল আর সাদা বিষাক্ত ফেনায় ভরে উঠেছে গোটা পরিবেশ।
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: নগরীর বায়েজিদ শিল্পাঞ্চলের প্রধান সড়ক পাশঘেঁষা একটি ড্রেন যেন ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্যের খাতে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার একটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে রাসায়নিক বর্জ্য কোন রকম শোধন ছাড়া সরাসরি ছেড়ে দিচ্ছে এই ড্রেনে। ফেনিল স্তর, গাঢ় কালো তরল, পচা গন্ধ সব মিলিয়ে এখানকার পরিবেশ দুষিত ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, একটি বড় ড্রেনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে রাসায়নিক মিশ্রিত তরল। এতে জমেছে ফেনা, রয়েছে প্লাস্টিক, কাঠের টুকরো, বোতলসহ বিভিন্ন আবর্জনা। আশপাশের স্থাপনা ও বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের পেছন ঘেঁষেই চলছে এই বিষাক্ত নিঃসরণ।

স্থানীয়রা বলছেন, দিনের পর দিন এমনভাবে ড্রেনে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। গন্ধে পাশে দাঁড়ানো কঠিন।  এসব রাসায়নিক পানির সঙ্গে মিশে আরও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি কর্ণফুলী নদীতেও পৌঁছায়। এতে একদিকে নদীর জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে এই দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের খাদ্যচক্রেও।

ফুটপাথের এক ক্ষুদ্র দোকানি মো. জাহাঙ্গীর বলেন, “সকালে দোকান খোলার পর সবচেয়ে কষ্ট হয় এই দুর্গন্ধ সহ্য করতে। অনেকেই আসে না, বলে গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। বেচাকেনায় খুব সমস্যা হয়।”

পথচারী কলেজছাত্রী রেশমা আক্তার জানান, “ প্রতিদিন এই রাস্তায় হাঁটি। গন্ধে মাঝে মাঝে বমি চলে আসে। পায়ে পানি ছিটে গেলে চুলকানি হয়।”

সেখানে ফুটপাথের আর এক দোকানি বলেন, বছরের পর বছর ধরে এভাবে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আরেকজন পথচারী মো. খালেদ বলেন, “এই ড্রেনের পাশ দিয়ে গেলে চোখ জ্বালা করে। এটা কোনো শহরের চিত্র না। মনে হয় বিষের নদী বয়ে চলেছে।”

পরিবেশবিদদের মতে, এ ধরনের রাসায়নিক বর্জ্যে থাকে হেভি মেটাল ও বিষাক্ত যৌগ, যা মিশে গেলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়, পানির উৎস হয়ে পড়ে বিপজ্জনক। এগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে জন্ম দিতে পারে ক্যান্সার, লিভার ও কিডনির জটিল রোগ, এমনকি শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিও ঘটায়।

 পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় এই এলাকা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে হলেও তারা এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।” প্রশ্ন উঠেছে—ভয়ংকর বাস্তবতা প্রকাশ্যে থাকা সত্ত্বেও কেন এখনো উদ্যোগ নেই?

চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও প্রধান বাণিজ্যিক বন্দরনগরী। এখানে এভাবে অনিয়ন্ত্রিত শিল্পবর্জ্য নিঃসরণ শুধু পরিবেশগত বিপর্যয়ই নয়, নাগরিক জীবনের ওপরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। এমন দূষণ বন্ধে শিগগিরই কঠোর আইন প্রয়োগ ও মনিটরিং প্রয়োজন।