বিজনেসটুডে২৪ প্রতিবেদন
বিশ্বজুড়ে এক অদৃশ্য কিন্তু ভয়ংকর দূষণ নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে, যার নাম সিসা। এটি একটি ভারী ধাতু যা মানুষের দেহে প্রবেশ করলে ক্ষতির মাত্রা সীমাহীন। বিশেষ করে শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি এক ভয়ঙ্কর বিপদ। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা বারবার বলে এসেছেন যে, রক্তের মধ্যে সিসার কোনও নিরাপদ মাত্রা নেই। তারপরও লাখ লাখ শিশু আজ এই দূষণের কবলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সিসা শরীরে জমতে থাকে এবং এক সময় তা মস্তিষ্ক, যকৃত, হাড় ও কিডনিতে ভয়ানক প্রভাব ফেলে। শিশুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও মারাত্মক। বুদ্ধিমত্তার বিকাশে বাধা, শারীরিক বৃদ্ধি থেমে যাওয়া, শেখার ক্ষমতা হ্রাস এবং আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় শিশুদের মৃত্যুও ঘটতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি জানিয়েছে, শিশুর রক্তে প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা থাকলে সেটি বিপজ্জনক ধরা হয়। অথচ, বিশ্বের বহু দেশে বহু শিশুর রক্তে এই মাত্রা কয়েকগুণ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ৮০০ মিলিয়ন শিশু আজ সিসা দূষণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু উচ্চমাত্রার সিসা নিয়ে জীবনযাপন করছে। এই পরিসংখ্যান ভয়াবহ এবং উদ্বেগজনক।
বিশ্বজুড়ে সিসা ছড়িয়ে পড়ার উৎসগুলোও বহুবিধ। পুরনো ব্যাটারি কারখানা, অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পরিচালিত রিসাইক্লিং ব্যবস্থা, সিসাযুক্ত রং, পাইপলাইন এবং খেলনা ইত্যাদির মধ্যে এই ধাতু থাকা অস্বাভাবিক নয়। অনেক সময় এসব উৎস থেকে সিসা ধুলো হয়ে বাতাসে মিশে যায় এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। পানি বা খাবারের মাধ্যমেও এটি মানুষের দেহে পৌঁছে যেতে পারে।
আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে সমস্যাটি বেশি প্রকট। কারণ, এসব দেশে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া অনিয়ন্ত্রিত, স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না, সচেতনতার অভাব রয়েছে এবং নীতিমালার বাস্তবায়ন দুর্বল। অনেক সময় শিশুদের বাসস্থান কিংবা স্কুলের পাশেই ব্যাটারি কারখানা গড়ে ওঠে, যা সরাসরি তাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়।
বিশ্ব এখন টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত না করে সেই উন্নয়ন যে অসম্পূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিসা দূষণ একটি স্বাস্থ্য ইস্যু নয় শুধু, এটি একটি নৈতিক সংকটও বটে।
📢 আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রতিবেদনটি ভালো লাগে, লাইক দিন ও বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। শিশুদের সুরক্ষায় সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করুন।