Home Second Lead কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপজ্জনক মাত্রায়, সেকেন্ডে ৫৮ হাজার কিউসেক ছাড়া হচ্ছে

কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপজ্জনক মাত্রায়, সেকেন্ডে ৫৮ হাজার কিউসেক ছাড়া হচ্ছে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাঙামাটি: টানা ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল মিলেমিশে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়েছে। দফায় দফায় পানি ছাড়ার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। শুক্রবার দুপুরে হ্রদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১০৮ দশমিক ৭৫ এমএসএল-এ পৌঁছে যায়, যা সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুটের একেবারে কাছাকাছি।

পানি কমাতে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট তিন ফুট পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫৮ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি নির্গত হচ্ছে। তারপরও পানি বিপদসীমার উপরে থাকায় ভাটি এলাকার মানুষদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

হ্রদের অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধিতে রাঙামাটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। সদর উপজেলার রিজার্ভমুখ, পুরানবস্তি, জুলুক্যাপাহাড়, রাজদ্বীপ, শান্তিনগর, মানিকছড়ি, রাঙাপানি, বালুখালী, মগবান, জীবতলী, বন্দুকভাঙা, কুতুকছড়ি—প্রায় সব নিচু এলাকা প্লাবিত। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, বিশেষ করে রাঙাপানি–আসামবস্তি সড়ক পানির নিচে।

বাঘাইছড়ি উপজেলার আটটির মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়ন বঙ্গলতলী, মারিশ্যা, রূপকারী, খেদারমারা, আমতলী ডুবে গেছে। ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে এবং পৌর এলাকার ৯টির মধ্যে ৫টি ওয়ার্ড পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লংগদু উপজেলার ঝরনাটিলা, ভাসাইন্যাদম, জালিয়াপাড়া, সোনাগাঁওপাড়া, বড় কলোনি পানিতে ডুবে আছে। বিলাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর ও কাপ্তাই উপজেলার নিচু অঞ্চলও একইভাবে প্লাবিত।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন ২৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে, যার মধ্যে বাঘাইছড়ি ও লংগদুতে অনেক পরিবার ইতোমধ্যেই অবস্থান নিয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণ বিতরণ চলছে, আর পানিবন্দি মানুষের তালিকা তৈরি করে খাদ্যশস্য ও সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

পানি ছাড়ার ফলে কর্ণফুলী নদীতে স্রোত বেড়ে চন্দ্রঘোনা–রাইখালী নৌরুটে ফেরি চলাচল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি রাঙামাটি–বান্দরবানগামী যাত্রীদেরও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, স্রোত কমার আগ পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

বর্তমানে প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, কারণ আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে পানির মাত্রা আবার বাড়তে পারে।