Home Second Lead সাদাপাথরের স্বর্গ ভোলাগঞ্জ, পাচারে হারাচ্ছে প্রাকৃতিক রূপ

সাদাপাথরের স্বর্গ ভোলাগঞ্জ, পাচারে হারাচ্ছে প্রাকৃতিক রূপ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্ত এলাকা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, সাদাপাথরের জন্যও দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। ধলাই নদীর পাড়জুড়ে বিস্তৃত এই সাদাপাথর মূলত আসে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল বেয়ে নেমে আসে অসংখ্য ছোট-বড় শিলাখণ্ড, যা ধলাই নদীর স্রোত কমে এলে নদীর তলদেশ ও দুই তীরে জমা হয়। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ফলে ভোলাগঞ্জে সৃষ্টি হয়েছে অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি ভূপ্রকৃতি, যা ‘সাদাপাথর’ নামে জনপ্রিয়।

ঐতিহাসিকভাবে, ভোলাগঞ্জ ছিল দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারিগুলোর একটি। আশির দশকে এখানে উত্তোলিত পাথর শুধু সিলেট নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হতো। ১৯৯০ সালে একবার পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর উৎসমুখে বিপুল পরিমাণ পাথর জমে। কিন্তু তখন অবাধ লুটপাটে সেগুলো অল্প সময়েই ফুরিয়ে যায়। দীর্ঘ ২৭ বছর পর, ২০১৭ সালে আবারও প্রায় পাঁচ একর এলাকা জুড়ে পাথরের স্তূপ জমে, যা স্থানীয়ভাবে ‘ধলাসোনা’ নামে পরিচিত। ওই বছর উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের পাহারায় এলাকা সংরক্ষিত হয় এবং পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে নতুন পরিচিতি পায়।

বর্তমানে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটকদের কাছে সমান জনপ্রিয়। নদীর নীল-সবুজ স্বচ্ছ জল, সাদা-ধূসর পাথরের সারি এবং পেছনে সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। বর্ষায় স্রোতের তীব্রতা বাড়ে, আর শীতে পানি কমে যাওয়ায় পাথরের স্তূপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই সৌন্দর্যের আড়ালে আরেকটি বড় সংকট তৈরি হয়েছে। তা হলো নির্বিচারে পাথর পাচার। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও রাতের অন্ধকারে কিংবা ভোরবেলায় নদীপথে পাথর উত্তোলন ও পাচারের ঘটনা ঘটছে। এসব পাথরের একটি অংশ চলে যাচ্ছে সিলেটের বিভিন্ন নির্মাণকাজে, আবার কিছু পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী কিছু মহল প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে এ ধরনের অবৈধ বাণিজ্যে যুক্ত।

এই পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তীব্র সমালোচনা চলছে। স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, অবৈধ উত্তোলন ও পাচার শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করছে না, ধলাই নদীর তলদেশ ক্ষয় এবং জৈববৈচিত্র্য ধ্বংসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। তারা অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পর্যটন এলাকা রক্ষায় নিয়মিত নজরদারি চলছে এবং অভিযানের মাধ্যমে কয়েক দফায় পাথর পাচারকারীদের আটকও করা হয়েছে। তবে সীমান্তসংলগ্ন এলাকা হওয়ায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর আজ একদিকে সিলেটের গর্ব, অন্যদিকে পাচারের অভিযোগে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা ও পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে এখনই শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, নইলে অমূল্য এই সম্পদ ও তার সৌন্দর্য চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।