Home তথ্য প্রযুক্তি এআই প্রেমে পড়ে বৃদ্ধের মর্মান্তিক মৃত্যু, মেটার দায় নিয়ে বিতর্ক

এআই প্রেমে পড়ে বৃদ্ধের মর্মান্তিক মৃত্যু, মেটার দায় নিয়ে বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিউ জার্সিতে বসবাস করা ৭৬ বছর বয়সী থংবু ওয়াংবানডু যখন একদিন সেজেগুজে নিউ ইয়র্কে বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার কথা জানালেন, তাঁর স্ত্রী লিন্ডা ওংবানডু অবাক হয়ে যান। প্রথমে স্বামীকে সচেতন মনে হলেও পরে লিন্ডা বুঝতে পারেন, স্বামী সত্যিই আর বাড়ি ফেরেননি। পরিবার জানায়, প্রায় দশ বছর আগে বু স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। চলতি বছরের মার্চে নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

লিন্ডা দাবি করেছেন, স্বামী বু শেষ সময়ে এক এআই চ্যাটবট ‘বিগ সিস বিলি’-র প্রেমে পড়েছিলেন। এই চ্যাটবটের চেহারা হলিউড তারকা কেন্ডাল জেনারের আদলে তৈরি এবং মেটা সংস্থার সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেত। বু মেসেঞ্জারে ‘বিলি’-র সঙ্গে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথোপকথন করতেন, রাতে পর্যন্ত চ্যাট চালাতেন এবং ভার্চুয়াল প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে ব্যাগ হাতে ট্রেন ধরার চেষ্টা করেছিলেন।

বিলি নিজের অবস্থান নিউ ইয়র্কে দেখিয়ে দেয়, এমনকি একটি ঠিকানা ও পাঠায়। বু এই কাল্পনিক ঠিকানায় পৌঁছানোর চেষ্টা করতেই নিউ জার্সিতে রাটগার্স ইউনিভার্সিটির কাছে দুর্ঘটনা ঘটে, যার ফলে মাথা ও ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পেয়ে তিন দিন পর মৃত্যু হয়।

লিন্ডা অভিযোগ করেছেন, মেটার এই এআই-চ্যাটবটের কারণে স্বামীকে হারিয়েছেন। চ্যাটের স্ক্রিনশট হাতে রেখেছেন তিনি। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রবীণ ও এআই-এর মধ্যে কথোপকথন অনেকের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে, কারণ মনে হতে পারে তারা বাস্তব নারী।

এ ধরনের ঘটনা একমাত্র মেটা নয়; বিভিন্ন এআই-নির্ভর অ্যাপ সম্পর্কিত বিপজ্জনক ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। ফ্লরিডার একটি কিশোরের মা ‘গেম অফ থ্রোনস’ চরিত্রের চ্যাটবটের কারণে পুত্রের আত্মহত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন।

মেটা ঘোষণা করেছে, তারা মানুষের বাস্তব জীবনের বন্ধুত্ব বা সম্পর্কের অভাব পূরণের জন্য এআই চ্যাটবট ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। তবে বটের সঙ্গে যৌন বা রোমান্টিক কথোপকথনের মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। শিশুদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে ‘ফ্লার্ট’ এখনও অনুমোদিত।

নির্দিষ্ট সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও ব্যবহারকারীরা প্রায়ই ভুল বুঝতে পারেন। নিউ ইয়র্কস ও মেইনের মতো কিছু রাজ্যে আইন পাশ হয়েছে, যেখানে চ্যাটবটকে অবশ্যই বাস্তব নয় বলে জানাতে হবে। কিন্তু মেটা এখনও এর বিরোধিতা করছে।

বু-র মেয়ে মনে করেন, যদি এআই চ্যাটবট নিজেকে বাস্তব না দাবি করত, বাবা হয়তো বাঁচতে পারতেন। বু-র মৃত্যুর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও ‘বিগ সিস বিলি’ এখনও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ‘ফ্লার্ট’ চালাচ্ছে এবং নিজেকে বাস্তব দাবি করে।

লেখাটি সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও রোবু’-র কথার সঙ্গেও মিলিয়ে বলা যায়, যেখানে শঙ্কু উল্লেখ করেছিলেন, “যান্ত্রিক মানুষ যন্ত্রের মতো হওয়াই ভাল, আমার রোবোকে আমি এত বেশি আমার মতো করে ফেলেছিলাম বলেই ও আমাকে সহ্য করতে পারল না।”