বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপথে কন্টেইনার শিপিং খাতে দীর্ঘ এক বছরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার পর অবশেষে কার্বন নিঃসরণ সূচক কমেছে। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান পরিবহন খাতের জন্য আশাব্যঞ্জক খবর।
ওশান ও এয়ার ফ্রেইট বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম জেনেটা এবং মেরিন বেঞ্চমার্কের যৌথভাবে প্রকাশিত কার্বন এমিশনস ইনডেক্সে (সিইআই) বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের পর প্রথমবারের মতো সূচক ১০০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৭-এ। এর আগে পরপর ১২ মাস সূচকটি ১০০-এর ওপরে ছিল, যা পরিবেশবাদী মহল ও বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লোহিত সাগরে চলমান সংঘাত এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে জাহাজগুলো দীর্ঘতর রুট ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিল। এতে জ্বালানি খরচ ও কার্বন নিঃসরণ গত বছর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। তবে এ বছর জাহাজ পরিচালনায় গতি নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি দক্ষতার উন্নয়ন এবং সবুজ প্রযুক্তির আংশিক প্রয়োগের কারণে নিঃসরণ সূচক ইতিবাচক দিকে মোড় নিয়েছে।
শিপিং শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র একটি শুরু। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই সমুদ্রপথে সম্পন্ন হয়, ফলে এই খাতের টেকসই উন্নয়ন ছাড়া বৈশ্বিক পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে জাহাজ মালিক ও অপারেটররা বিকল্প জ্বালানি যেমন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস ও হাইড্রোজেন ব্যবহারের উদ্যোগ নিচ্ছে। পাশাপাশি কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি ও জ্বালানি সাশ্রয়ী ইঞ্জিন ব্যবহারের ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ত কন্টেইনার হাব হিসেবে পরিচিত। এখান দিয়ে দেশের প্রায় ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবাহিত হয়। ফলে বৈশ্বিক শিপিং খাতে কার্বন নিঃসরণ কমার প্রবণতা বাংলাদেশের জন্যও ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে জ্বালানি ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে কন্টেইনার ভাড়া কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা সরাসরি আমদানি ব্যয় কমাতে সাহায্য করবে।
অন্যদিকে, টেকসই শিপিং ব্যবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা আরও বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হলে বন্দর কর্তৃপক্ষকে সবুজ অবকাঠামো, জ্বালানি সাশ্রয়ী সরঞ্জাম এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এতে কেবল বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান মজবুত হবে না, বরং আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের কাছেও দেশটি পরিবেশবান্ধব বন্দর হিসেবে পরিচিতি পাবে।
বাণিজ্যিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈশ্বিক নিঃসরণ সূচক হ্রাসের এই ধারা অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও আরও পরিবেশবান্ধব পথে এগোতে পারবে। তবে এজন্য সরকার, শিপিং কোম্পানি ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।