হেলথ ডেস্ক: মাতৃদুগ্ধকে বলা হয় নবজাতকের অমৃত। জীবনের প্রথম মুহূর্ত থেকেই মায়ের বুকের দুধই শিশুর স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি এবং রোগপ্রতিরোধের মূল ভিত্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য ভারতের বিহারের ছয় জেলায় মায়ের বুকের দুধে মিলেছে মারাত্মক ক্ষতিকর ধাতু সীসা।
পাটনার মহাবীর ক্যানসার সংস্থান অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের গবেষক দল জানিয়েছেন, সমস্তিপুর, দারভাঙ্গা, বেগুসরাই, খাগারিয়া, মুঙ্গের এবং নালন্দা জেলায় সংগ্রহ করা ৩২৭ জন নারীর নমুনার মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ দুধেই সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি নমুনায় প্রতি লিটার দুধে সীসার মাত্রা দাঁড়িয়েছে ১৩০৯ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমার তুলনায় বহু গুণ বেশি। শুধু দুধ নয়, নারীদের প্রায় ৮৭ শতাংশের রক্তেও গ্রহণযোগ্য সীমার উপরে ধাতুটির উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
গবেষক অভিনব শ্রীবাস্তব সতর্ক করেছেন, শিশুর শরীরে সামান্য সীসাও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্কের বিকাশ এবং হাড়ের গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। জন্মের সময় কম ওজন, শেখার ক্ষমতা হ্রাস, আচরণগত সমস্যা এবং বুদ্ধিবিকাশে বিলম্বের ঝুঁকিও তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞ মত
শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে সীসা প্রবেশ করলে তা ধীরে ধীরে স্নায়ুকোষের ক্ষতি করে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হক বলেন, “শিশুর মস্তিষ্ক এখনও পূর্ণ বিকশিত নয়। এ সময় বিষাক্ত ধাতু দেহে ঢুকলে ভবিষ্যতে মানসিক বিকাশে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় বাচ্চারা কথা শেখায় বিলম্বিত হয় বা শেখার ক্ষমতা হারায়।”
অন্যদিকে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৪ কোটিরও বেশি শিশু উচ্চমাত্রার সীসা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ভূগর্ভস্থ জল, মাটি ও খাদ্যের মাধ্যমে এই ধাতুর প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
কেন ঘটছে
বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ব্যাখ্যা, বিহারের গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলের মাটিতে সীসা ও অন্যান্য ভারী ধাতুর উপস্থিতি বেশি। ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে তা শরীরে প্রবেশ করছে। এছাড়া কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক, প্রসাধনী, আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং রং মেশানো হলুদ থেকেও দেহে প্রবেশ করছে সীসা।
সমাধানের পথ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাতৃদুগ্ধে সীসার মতো ধাতুর উপস্থিতি জাতীয় স্বাস্থ্য সংকট ডেকে আনতে পারে। এর প্রতিরোধে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ, প্রসাধনী ও আয়ুর্বেদিক ওষুধে বিষাক্ত উপাদান শনাক্তকরণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মায়েদের রক্ত ও দুধ পরীক্ষা চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এই গবেষণা শুধু বিহার নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য সতর্ক সংকেত। নবজাতকের সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য এখনই প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ ও পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি।
👉 শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে আপনার কী মতামত? নিচে মন্তব্য করে জানান।