Home Second Lead টেকনাফে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার: সীমান্তে বাড়ছে নাশকতার ঝুঁকি

টেকনাফে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার: সীমান্তে বাড়ছে নাশকতার ঝুঁকি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এবার কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ২৬ আগস্ট নাফ নদীর হ্নীলা খরের দ্বীপ এলাকায় চালানো অভিযানে ৫০৭ রাউন্ড গুলি, ২টি রাইফেল, ৮টি ম্যাগাজিন, একটি এলএমজি-১৬ এবং একটি এমআইসহ চারটি আধুনিক অস্ত্র উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় নতুন করে সামনে এসেছে সীমান্তের নিরাপত্তা ঝুঁকি।

উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জসীম উদ্দিন জানান, সন্দেহজনক উপস্থিতি টের পেয়ে বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালান। এ সময় কয়েকজন অস্ত্র চোরাকারবারি একটি রাউন্ড ফায়ার করে মিয়ানমারের ভেতরে পালিয়ে যায়। পরে এলাকা তল্লাশি করে লুকানো অবস্থায় অস্ত্র-গুলির সন্ধান মেলে। উদ্ধার হওয়া গুলির মধ্যে ছিল ১৯৯ রাউন্ড জি-৩ রাইফেলের, ১২০ রাউন্ড এমআইয়ের এবং ১৮৮ রাউন্ড এলএমজি-১৬ এর গুলি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নাফ নদী ও টেকনাফ সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মিয়ানমারের রাখাইন ও আরাকান অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সক্রিয় উপস্থিতি এ ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের আড়ালে এ চোরাচালান কার্যক্রম আরও জটিল রূপ নিয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় শরণার্থী শিবিরগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লুকিয়ে থাকার জন্যও ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।

বিজিবি মনে করছে, উদ্ধার হওয়া অস্ত্র-গুলি যে কোনো সময় নাশকতামূলক কার্যক্রম বা অপরাধচক্রের চোরাচালানে ব্যবহার হতে পারত। বাংলাদেশে মাদক কারবারকে নিরাপদ রাখতেই অস্ত্র চোরাচালান বাড়ছে বলে ধারণা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করে, আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্র এ অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে এবং স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে সীমান্তপথে অস্ত্র ঢোকানো হচ্ছে।

লে. কর্নেল মো. জসীম উদ্দিন বলেছেন,
“দেশের নিরাপত্তা ও জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। সীমান্তে মাদক, চোরাচালান বা অস্ত্রের কোনো প্রবেশ মেনে নেওয়া হবে না।”

তিনি আরও জানান, অস্ত্র-গুলির উৎস খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে টহল, নজরদারি এবং প্রযুক্তিনির্ভর পর্যবেক্ষণও আরও বাড়ানো হচ্ছে।

টেকনাফ সীমান্তে বিপুল অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার শুধু একটি অভিযান নয়, বরং সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি সতর্কবার্তা। নাফ নদী ও সীমান্তপথে অস্ত্র-মাদকের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি সামাজিক স্থিতিশীলতাও বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ কারণে সীমান্তে কঠোর নজরদারি, গোয়েন্দা কার্যক্রমের সমন্বয় এবং আঞ্চলিক সহযোগিতাই এখন সবচেয়ে জরুরি।