বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুমিল্লা: চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের চাপাচৌঁ গ্রামে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন স্থানীয় পরিচিত মুখ ও ব্যবসায়ী সুধীর বাবু। দীর্ঘদিন লিভার ক্যান্সারে ভুগে শেষ পর্যন্ত তিনি নিজ বাড়িতে পরলোকগমন করেন। রাতেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও পাঁচ কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সুধীর বাবুর জীবন কেবল ব্যবসা বা পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তার জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক ছিল বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন। ছোটবেলা থেকে তার অপরূপ ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আমীর হোসেন সওদাগর। দুজনেই একই এলাকায় বড় হয়েছেন, একসঙ্গে খেলাধুলা ও আড্ডা করেছেন, পরবর্তীকালে স্থানীয় গুণবতী বাজারের ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সময় পেলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা একসঙ্গে কাটাতেন, আর সেই বন্ধুত্বকে সকলেই চিহ্নিত করতেন স্যাঁতসেঁতে হাসি আর আন্তরিক কথোপকথনের মাধ্যমে।
সাধারণ মানুষও আজীবনের জন্য মনে রেখেছে তাদের বন্ধুত্বের এক মুহূর্ত। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, যখন আমীর হোসেনের শেষকৃত্য হয়, তখন সুধীর বাবুর কান্নার ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। জানাজার মাঠের পেছনে গাছের গুঁড়িতে বসে তিনি চোখের জল ফেলে বন্ধুর প্রয়াণকে স্মরণ করেছিলেন। সেই মুহূর্তে উপস্থিত প্রত্যেকে আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবি লাখ লাখ মানুষ শেয়ার করে মন্তব্য করেছিলেন— ‘বন্ধুত্ব মানে না জাত-ধর্ম’।
বন্ধু হারানোর ব্যথা সামলাতে না পেরে সুধীর বাবু নিজেও একসময় ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। আর সেই বন্ধুত্ব, যা শুধুমাত্র শৈশবের আড্ডা নয়, বরং জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্তে একে অপরের সহচর ছিল, তা এখন কেবল স্মৃতিতেই বেঁচে আছে।
চার বছর আগে বন্ধু হারানোর পরও সুধীর বাবু তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই বন্ধুত্বের স্মৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন। আজ তার প্রয়াণ শুধু ব্যক্তিগত শোক নয়, এটি স্থানীয় সমাজের জন্য একটি শিক্ষা— সত্যিকারের বন্ধুত্ব কেবল সময় নয়, হৃদয়ের গভীরে রচিত হয়।
সুধীর বাবুর জীবন ও তার বন্ধুত্বের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সম্পর্কের মূল্য কখনও নয়—এটি অনুভূতি, আন্তরিকতা ও স্থায়ী ভালোবাসার মাপকাঠিতে মাপা যায়। তার চলে যাওয়া সত্বেও আমরা সবসময় মনে রাখব সেই চোখের জলের ছবি, যা শতকরা একবারের জন্য বন্ধুত্বকে চিরস্থায়ী করে দিয়েছে।