মো. আজিজার রহমান, খানসামা (দিনাজপুর): দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ২নং ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের মেধাবী তরুণ অনুকূল রায় (১৬) নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন একটি বিমান। “The Royal Sky-110” নামের বিমানটি শুক্রবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে আকাশে উড়িয়ে দেখান তিনি। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিমানটি দেখতে ভিড় জমায় স্থানীয় মানুষ, শিক্ষার্থী ও শিশুরা।
অনুকূল জানান, বিমানটি তৈরিতে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে। এর আগে ২০২৩ সালে তিনি একটি রোবট তৈরি করেছিলেন। অনুকূল ২০২৪ সালে আংগারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। তিনি বলেন, “সরকারি সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেলে ভবিষ্যতে আরও নতুন উদ্ভাবনী কাজ করতে চাই। আমার লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা এবং দেশের জন্য কিছু করা।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, অনুকূলের এই উদ্ভাবনী মনোভাব শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং পুরো উপজেলার শিক্ষার্থী ও যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণা। স্থানীয় শিক্ষক পরাণ চন্দ্র রায় বলেন, “এ ধরনের উদ্যোগ শিশু ও তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। অনুকূল আমাদের গ্রামের জন্য এক দৃষ্টান্ত।”
বিমান তৈরির বৈজ্ঞানিক দিক
বিশেষজ্ঞরা জানান, বিমান উড্ডয়নের মূল ভিত্তি হলো চারটি শক্তি—লিফট (উপরে ওঠার বল), ওজন, থ্রাস্ট (মোটরের সামনের দিকে টান) ও ড্র্যাগ (বাতাসের প্রতিরোধ)। এই ভারসাম্যের কারণেই আকাশে বিমান টিকে থাকে।
অনুকূলের বিমানটিতে ব্যবহৃত হয়েছে আধুনিক BLDC মোটর, যা উচ্চ গতিতে ঘুরে প্রপেলার চালায় এবং থ্রাস্ট তৈরি করে। ৮ ইঞ্চি প্রপেলার দিয়ে বাতাস কাটার ফলে যথেষ্ট লিফট তৈরি হয়। এ ছাড়া বিমান চালাতে তিনি ব্যবহার করেছেন লিকো ব্যাটারি (৩ সেল, ১১.১ ভোল্ট), যা হালকা ও দীর্ঘক্ষণ শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম।
বিমান নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়েছে Flysky FS-i6 রেডিও কন্ট্রোলার, যা ২.৪ গিগাহার্জ প্রযুক্তিতে প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকেও বিমান নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিমানের দিক পরিবর্তন ও ভারসাম্য রক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে ৯ গ্রাম ওজনের চারটি সার্ভো মোটর। আর বডি ককপিটে রাখা হয়েছে এর মূল কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
এ সাফল্যে এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। সবাই আশা করছেন, অনুকূল ভবিষ্যতে আরও বড় উদ্ভাবনী প্রকল্প হাতে নেবেন এবং দেশের প্রযুক্তি খাতে অবদান রাখবেন।
স্থানীয়দের মতে, অনুকূলের এই সাফল্য কেবল একটি গ্রামীণ তরুণের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেও বৈজ্ঞানিক সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সম্ভব—এরই বাস্তব উদাহরণ।










