Home First Lead ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান, প্রাণহানি ৬২২

ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান, প্রাণহানি ৬২২

 বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: পূর্ব আফগানিস্তানে সোমবার রাতে আঘাত হানা ৬.০ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৬২২ জনের মৃত্যু ও ১,৫০০ জনের বেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র ছিল নাঙ্গারহার প্রদেশের জালালাবাদ শহরের পূর্বাঞ্চলে, এবং এটি ছিল ভূগর্ভের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে—যা এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

ভূমিকম্পের প্রভাবে নাঙ্গারহার ও কুনার প্রদেশে অবকাঠামো, কৃষিখাত ও ক্ষুদ্র ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় অর্থনীতি মূলত কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নির্ভর হওয়ায় এই বিপর্যয়ের ফলে দীর্ঘমেয়াদে হাজার হাজার পরিবারের আয় উৎস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, কেবল বাড়িঘরই নয়, ছোট ছোট দোকান, বাজার, ফসলের খামার ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও ধ্বংস হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণে এখনও সময় লাগবে।

ধসে পড়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, দোকান ও স্কুল ভবন। বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন, হাসপাতাল ও বাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। অন্তত ১২টি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে বেশ কিছু এলাকায়, ফলে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

মানবিক ক্ষতির দিক থেকে এখন পর্যন্ত ৬২২ জন নিহত এবং ১,৫০০ জনের বেশি আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রায় ২০,০০০ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আহতদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হচ্ছে, তবে সেগুলোর অনেকগুলোরই নিজস্ব ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক এলাকায় এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ, রেড ক্রস, তুরস্ক ও পাকিস্তানসহ একাধিক দেশ জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ, ওষুধ, তাঁবু ও উদ্ধার দল পাঠাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, তবে এখনও অর্থনৈতিক সহায়তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেবলমাত্র পূর্বাঞ্চল পুনর্গঠনে প্রয়োজন হতে পারে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো উৎপাদন ও উপার্জন থেকে ছিটকে পড়ায় ভোক্তা ব্যয় হ্রাস পাবে, যা স্থানীয় বাজার ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করবে। এছাড়া আফগানিস্তানের দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো এবং দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা সংকুচিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও দুর্বল হতে পারে।

আফগানিস্তান এমনিতেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও রাজনৈতিকভাবে অনিশ্চিত একটি রাষ্ট্র। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশটির স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের গতিকে আরও পিছিয়ে দেবে বলে মনে করছেন উন্নয়ন বিশ্লেষকরা। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত মানবিকতার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা নিশ্চিত করা, যাতে অন্ততপক্ষে আবাসন, খাদ্য ও মৌলিক পরিষেবা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।