Home Third Lead প্রবাসী জীবনের অচেনা চাপ: একাকিত্ব থেকে মানসিক অবসাদ

প্রবাসী জীবনের অচেনা চাপ: একাকিত্ব থেকে মানসিক অবসাদ

আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: প্রবাসী জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অচেনা চাপ, যা সবসময় দৃশ্যমান হয় না। কাজের আশায় বা পরিবারের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য ভিনদেশে যাওয়া অনেক সময় স্বপ্নপূরণের মতো মনে হলেও, বাস্তবে সেখানে অপেক্ষা করে একাকিত্ব, সাংস্কৃতিক বৈষম্য এবং মানিয়ে নেওয়ার অদৃশ্য সংগ্রাম।

মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ কিংবা আমেরিকার প্রবাসীরা প্রায়ই ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, কাজের অতিরিক্ত চাপ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হন। এতে মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ এবং আত্মবিশ্বাস হারানোর মতো সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে যেসব নারী স্বামীর কর্মসূত্রে বিদেশে যান, তারা প্রায়ই সামাজিক পরিসর হারিয়ে ফেলেন। নতুন দেশে বন্ধুবান্ধব নেই, আত্মীয়স্বজন নেই, ফলে সময় কাটে একাকিত্বে।

একজন প্রবাসী নারী এক সাক্ষাৎকারে জানান, “সকালে স্বামী কাজে যায়, সন্তান স্কুলে গেলে সারাদিন বাড়িতে একা থাকতে হয়। বাইরে গেলে ভাষা জানি না, কারও সঙ্গে মিশতেও সংকোচ হয়। ধীরে ধীরে মনে হয়, আমি যেন এক শূন্যতার মধ্যে বেঁচে আছি।” এই অভিজ্ঞতা প্রবাসী সমাজের বহু নারীরই বাস্তবতা।

প্রবাসীরা শুধু ব্যক্তিগত নয়, পারিবারিক স্তরেও চাপে থাকেন। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়। কাজের চাপে স্বামী পরিবারকে সময় দিতে না পারলে সম্পর্কের দূরত্ব বেড়ে যায়। সন্তানরাও কখনও কখনও মানিয়ে নিতে না পেরে মানসিক অশান্তিতে ভোগে।

মনোবিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অবহেলা করার মতো নয়। একাকিত্ব থেকে জন্ম নেয়া অবসাদই অনেক সময় ভয়ংকর সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয় মানুষকে। প্রবাসী পরিবারগুলোর জন্য তাই নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, কাউন্সেলিং ও সামাজিক যোগাযোগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আল খোবারে তিন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে সামনে এনেছে এই প্রশ্ন—প্রবাসী জীবনের মানসিক চাপ আমরা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি? কেবল অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে তাকালে চলবে না, প্রবাসীদের মানসিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।

👉 প্রবাসী জীবনের মানসিক চাপ ও পরিবারিক বাস্তবতা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন পড়তে বিজনেসটুডে২৪.কম-এর সঙ্গেই থাকুন।
আপনার অভিজ্ঞতা বা মতামত জানাতে মন্তব্য করুন এবং প্রতিবেদনটি শেয়ার করে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন।