Home আইন-আদালত সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা কারাগারে

সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা কারাগারে

সাবেক ডিসি সুলতানা
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সকাল ১১টায় সুলতানা পারভীন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। আদালতের এজলাসে প্রবেশের সময় তিনি প্রথমে কাঠগড়ায় উঠেননি এবং বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে সাংবাদিক আরিফের আইনজীবী বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাকে কাঠগড়ায় নেওয়া হয়।

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. বজলুর রশিদ ও অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর আদালত মুলতবি দেন এবং দুপুর আড়াইটায় শুনানি পুনরায় শুরু হয়। এ সময় উভয়পক্ষের শুনানি ও এজাহার পর্যালোচনা করে আদালত সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদেশের কিছু পরই প্রিজন ভ্যানে করে তাকে কারাগারে নেয়া হয়।

এর আগে ৩ আগস্ট সাবেক ডিসি হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করেছিলেন। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এরপর ২১ আগস্ট সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করেন, তবে সশরীরে উপস্থিত না হওয়ায় সাংবাদিক আরিফের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন। মঙ্গলবার আদালত সব আবেদন শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার পটভূমি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের বাসায় অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসনের তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা তাকে তৎক্ষণাৎ তুলে নিয়ে ধরলা নদীর তীরে ক্রসফায়ারের হুমকি দেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে তাকে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়। একই রাতে মাদক রাখার অভিযোগ দেখিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন। এই ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয় এবং একদিন পর সাংবাদিক আরিফকে জামিন দেওয়া হয়।

কারামুক্ত হয়ে সাংবাদিক আরিফ কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলার দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিটে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান বলেন, “সংবাদ প্রকাশের জেরে আমাকে বিনা অপরাধে নির্যাতন করা হয়েছিল। আজ প্রাথমিকভাবে আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছি। এটি দেশের সাংবাদিক সমাজ ও সহকর্মীদের জন্য স্বস্তির খবর।”

আরিফের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, “সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।”