তারিক-উল-ইসলাম, ঢাকা: বিশ্বব্যাপী সিমেন্ট শিল্প এখন ক্রমশ টেকসই প্রযুক্তি ও কার্বন নির্গমন হ্রাসের দিকে মনোনিবেশ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান কুইন্স কার্বন (Queens Carbon) সম্প্রতি ১ কোটি মার্কিন ডলারের সিড ফান্ডিং সংগ্রহ করেছে। এই অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটি পেনসিলভানিয়ার স্টকারটাউন এলাকায় একটি পাইলট প্ল্যান্ট স্থাপন করছে, যেখানে কার্বন-নিরপেক্ষ সিমেন্ট এবং বিকল্প সিমেন্ট উপকরণ উৎপাদন করা হবে।
প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন:
কুইন্স কার্বনের উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রচলিত পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের তুলনায় উৎপাদন তাপমাত্রা অর্ধেকেরও বেশি কমানো যায়। এতে চুনাপাথর থেকে নির্গত CO₂ রাসায়নিক গঠনের মধ্যে আটকে থাকে। উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ, বিকল্প জ্বালানি বা বর্জ্য তাপ ব্যবহার করা যায়। কোম্পানিটি দুটি পণ্য বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে—Q-SCM এবং উন্নয়নাধীন Q-Cement, যা উৎপাদনের সময় বিশুদ্ধ কার্বন ডাই-অক্সাইড আলাদা ধারা হিসেবে তৈরি করে।
বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পের বাস্তবতা:
দেশে বর্তমানে প্রায় ৪৫টি সিমেন্ট কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে, যার সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা বছরে প্রায় ৮ কোটিরও বেশি টন। তবে এর মাত্র ৪০-৪৫% ব্যবহার হয়। বাংলাদেশে চুনাপাথরের বড় কোনো খনি নেই, ফলে কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম ওঠানামা করায় উৎপাদন ব্যয় বেশি। স্থানীয় বাজার মূলত বড় অবকাঠামো প্রকল্পের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল, ফলে টেকসই সিমেন্টের চাহিদা সীমিত।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
বিষয় | কুইন্স কার্বন | বাংলাদেশ |
---|---|---|
কাঁচামাল | স্থানীয় খনি থেকে চুনাপাথর ও কাদামাটি | আমদানিনির্ভর, ক্লিংকার ও অন্যান্য উপকরণ |
প্রযুক্তি | কার্বন-নিরপেক্ষ, বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারযোগ্য | প্রচলিত OPC কিল্ন প্রযুক্তি |
কার্বন নির্গমন | উল্লেখযোগ্যভাবে কম | বৈশ্বিক মানদণ্ডে বেশি |
বাজার প্রবণতা | টেকসই নির্মাণসামগ্রীতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি | চাহিদা মূলত অবকাঠামো নির্ভর, টেকসই প্রবণতা সীমিত |
অর্থায়ন | ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, সরকারি অনুদান, সবুজ অর্থায়ন | স্থানীয় ব্যাংক ঋণ, উচ্চ সুদহার, সীমিত আন্তর্জাতিক সহায়তা |
বাংলাদেশের জন্য সুযোগ:
- সবুজ অর্থায়ন: আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল, গ্রিন বন্ড বা উন্নয়ন সংস্থা থেকে অর্থায়ন।
- প্রযুক্তি হস্তান্তর: কুইন্স কার্বনের মতো প্রযুক্তি যৌথ উদ্যোগ বা আমদানির মাধ্যমে প্রবর্তন।
- টেকসই নির্মাণ: পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্পে ব্যবহার।
- নীতিমূলক সহায়তা: কার্বন ট্যাক্স বা সবুজ উৎপাদনে কর ছাড় প্রযুক্তি গ্রহণ সহজ করবে।
যেখানে বিশ্ব টেকসই সিমেন্টের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, বাংলাদেশকেও এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কুইন্স কার্বনের উদ্ভাবন সরাসরি দেশীয় শিল্পে প্রয়োগযোগ্য নাও হতে পারে, তবে এর প্রযুক্তি গ্রহণ বা অভিযোজনের মাধ্যমে স্থানীয় সিমেন্ট শিল্পকে টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক রাখা সম্ভব।