Home Third Lead মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি: প্রবাসীদের জন্য কী নেই

মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি: প্রবাসীদের জন্য কী নেই

আমিরুল মোমেনিন: প্রবাস জীবনে সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি হলো মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি। শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসা অনেক দেশে তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য হলেও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত। ফলে একাকিত্ব, অবসাদ বা পারিবারিক চাপ যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে, তখন বেশিরভাগ প্রবাসী জানতেই পারেন না কোথায় সহায়তা পাবেন।

কেন এত ঘাটতি?

মধ্যপ্রাচ্যের মতো অঞ্চলে প্রবাসীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রধানত শারীরিক সমস্যার মধ্যে সীমিত। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা কম, আর সামাজিকভাবে বিষয়টি এখনও ট্যাবু। দক্ষিণ এশীয় পরিবারগুলোর মানসিকতা এমন যে, অবসাদ বা উদ্বেগকে সাধারণত “লজ্জাজনক” বিষয় বলে মনে করা হয়। তাই সমস্যা থাকলেও কেউ খোলাখুলি বলতে চান না।

অন্যদিকে, উন্নত দেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকলেও অনেক প্রবাসী ভাষাগত সীমাবদ্ধতার কারণে বা সাংস্কৃতিক কারণে সেই সেবা নিতে দ্বিধা করেন। ফলে সমস্যাটি থেকে যায় ভেতরে ভেতরে।

প্রবাসীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা

একজন প্রবাসী কর্মী জানিয়েছেন, “সারাদিন কাজ করি, রাতে ঘরে ফিরে চুপচাপ থাকি। কাউকে কিছু বলার সুযোগ নেই। মনে হয়, যদি কাউকে বলি তাহলে সবাই হাসবে বা ছোট করবে।” আরেকজন গৃহিণীর অভিজ্ঞতা, “এখানে কাউন্সেলিং আছে শুনেছি, কিন্তু কোথায় যেতে হবে জানি না। তার উপর স্বামীও মনে করে এগুলো বিলাসিতা।”

এই অভিজ্ঞতাগুলো প্রমাণ করে, প্রবাসীরা মানসিক সমস্যায় ভুগলেও তার সমাধান খুঁজে পান না।

বিশেষজ্ঞ মতামত

মনোবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অভাব শুধু ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক সংকটও তৈরি করছে। প্রবাসীদের মধ্যে আত্মহত্যা, পারিবারিক ভাঙন ও শিশুদের মানসিক অবসাদের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। তারা বলেন, প্রবাসীদের জন্য সহজলভ্য হেল্পলাইন, অনলাইন কাউন্সেলিং ও ভাষাভিত্তিক সাপোর্ট সিস্টেম জরুরি।

কী করা যেতে পারে?

প্রবাসী হেল্পলাইন চালু – নিজ দেশের দূতাবাসগুলো প্রবাসীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার হটলাইন চালু করতে পারে।

অনলাইন কাউন্সেলিং – প্রবাসীরা নিজ ভাষায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলে উপকার পাবেন।

সচেতনতা প্রচারণা – মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কলঙ্ক দূর করতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগ জরুরি।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ – প্রবাসী সমাজে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিক মানসিক সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।