Home Second Lead ভয়ংকর বাস্তবতা: বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের ৯০% মাদকাসক্ত ইয়াবায়

ভয়ংকর বাস্তবতা: বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের ৯০% মাদকাসক্ত ইয়াবায়

Man desperate and alone in the dark
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জ—বাংলাদেশে মাদকাসক্তির গ্রাফ ভয়াবহভাবে উর্ধ্বমুখী। আক্রান্তদের সিংহভাগই কিশোর ও তরুণ বয়সী, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। নারীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও তরুণ পুরুষদের মধ্যেই এ আসক্তি সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ইয়াবা বর্তমানে প্রধানতম মাদক হিসেবে বিস্তার লাভ করেছে। দেশে মোট মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই ইয়াবা সেবন করছে। এর মধ্যে শিক্ষিত তরুণদের সংখ্যাই উদ্বেগজনকভাবে বেশি।

সরকারি জরিপে ২০১৭ সালে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ধরা হয়েছিল ৮৩ লাখ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রকৃত সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি হবে। ভয়াবহ এই আসক্তি আজ সমাজ ও জাতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক শুধু ব্যক্তি নয়, পরিবার ও সমাজকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে।

চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মাদকাসক্ত তরুণদের মধ্যে জটিল রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। নেফ্রাইটিস, কিডনি ফেইলিউর, হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। লিভার ও প্যানক্রিয়াস ক্যানসারেও অনেক তরুণ অকালে মারা যাচ্ছে। নিউরো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন মাদক সেবনের ফলে অনিদ্রা, স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, হাঁটতে অক্ষমতা ও পক্ষাঘাতের মতো জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক তরুণদের মানবিকতা ও সহমর্মিতার বোধও কেড়ে নিচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছাত্র থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আসক্তির বিস্তার হচ্ছে। একসময় তারা ভয়ংকর হয়ে ওঠে, পরিবার বা সমাজের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা আর অবশিষ্ট থাকে না। এমনকি অনেক সময় চিকিৎসার সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত থাকে, কারণ পরিবার লজ্জা বা সামাজিক চাপের কারণে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে দ্বিধা করে। অথচ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও ভালোবাসা পেলে বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রাখে।

এ আসক্তি শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই নয়, বরং অপরাধপ্রবণতাও বাড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, মাদকাসক্তরা মাদকের টাকার জন্য ছিনতাই, ডাকাতি, এমনকি খুন করতেও দ্বিধা করে না। সংবাদপত্রে প্রায়ই দেখা যায়, মাদকের টাকার জন্য নিজের মা-বাবাকেও হত্যা করেছে এমন নির্মম ঘটনা।

এই ভয়ংকর বাস্তবতা প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক আন্দোলন ছাড়া তরুণ সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।

আজকের তরুণ সমাজই আগামী দিনের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। অথচ এ প্রজন্মের বড় একটি অংশ মাদকের অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। ইয়াবার ভয়াল আগ্রাসন থেকে তাদের মুক্ত করতে হলে এখনই সচেতন হতে হবে এবং পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি হয়ে পড়েছে।

CTA: 👉 সচেতন হোন, তরুণ সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে এখনই এগিয়ে আসুন।