নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় দেখা মিলেছে এক বিরল আকৃতির বকের। স্থানীয়ভাবে “কানি বক” নামে পরিচিত এই দেশি প্রজাতির বকটি স্বাভাবিকভাবে দুই পায়ে দাঁড়ালেও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আরও দুটি ছোট আকারের অতিরিক্ত পা। এমন দৃশ্য সচরাচর চোখে না পড়ায় গ্রামজুড়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে, প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন এটি একনজর দেখার জন্য।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বালাটারি গ্রামে। স্থানীয় হাঁড়িপাতিল ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রশিদের বাড়িতে রাখা হয়েছে চার পা-ওয়ালা এই বক। তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো ব্যবসার কাজ শেষে বুধবার বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে পুকুর পাড়ে একটি বক দেখতে পান। কাছে যেতেই লক্ষ্য করেন, এটি অন্য বকের মতো নয়—অতিরিক্ত দুটি পা রয়েছে এর শরীরে। পরে কৌশলে ধরে এনে বাড়িতে খাঁচায় রাখেন এবং মাছ খাইয়ে যত্ন নিচ্ছেন।
৬০ বছরের দর্শনার্থী মো. আজগর আলী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “এ বয়সে অনেক বক দেখেছি, কিন্তু চার পা-ওয়ালা বক কখনো দেখিনি। সবই আল্লাহর ইচ্ছে।”
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
ফুলবাড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান কনক জানান, এটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত দেশি প্রজাপতি বক বা কানি বক। জন্মগত জিনগত ত্রুটির (genetic mutation) কারণে এ ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে Polymelia বলা হয়। এ অবস্থায় ভ্রূণের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতার কারণে অতিরিক্ত অঙ্গ গজায়। সাধারণত এমন অঙ্গগুলো কার্যক্ষম হয় না, বরং ছোট ও দুর্বল অবস্থায় ঝুলে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের জন্মগত ত্রুটি খুবই বিরল। অনেক সময় পরিবেশগত দূষণ, জিনগত পরিবর্তন, কিংবা ভ্রূণের কোষ বিভাজনজনিত সমস্যা এর কারণ হতে পারে। প্রাণিজগতে এ ধরনের উদাহরণ আগে ছাগল, গরু কিংবা কচ্ছপের মধ্যে দেখা গেলেও পাখির মধ্যে ঘটনা আরও দুর্লভ।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
গ্রামের মানুষজন বিষয়টিকে অলৌকিক ঘটনা হিসেবে দেখছেন। কেউ এটিকে স্রষ্টার ইশারা হিসেবে উল্লেখ করছেন, আবার কেউ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মেনে কেবলই বিরল প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে দেখছেন। ফলে বকটি এখন এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ, এ ধরনের বিরল প্রাণী সংরক্ষণে রাখা উচিত গবেষণার আওতায়। তবে সাধারণত এ ধরনের অতিরিক্ত অঙ্গ পাখির স্বাভাবিক চলাফেরা ও উড়ার সক্ষমতায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, যদি না জটিলতা বেড়ে যায়।
👉 ফুলবাড়ির চার পা-ওয়ালা কানি বক তাই এখন শুধু স্থানীয় নয়, সারাদেশের প্রাণিপ্রেমীদের জন্যও এক বিরল কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠেছে।