আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। পুলিশের গুলিতে এখনও পর্যন্ত ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৮০ জন। বিক্ষোভের মূল কারণ সরকার কর্তৃক ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
বিক্ষোভের পটভূমি
সরকারের দাবি, সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ঘৃণাত্মক বক্তব্য, মিথ্যা সংবাদ এবং প্রতারণার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত সপ্তাহে ফেসবুকসহ কয়েকটি প্ল্যাটফর্মের অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপটি জনস্বার্থে নেওয়া হয়েছে।
তবে, ছাত্র-যুবরা এই পদক্ষেপকে বাকস্বাধীনতার উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছেন। তারা ‘দুর্নীতি বন্ধ করো, সামাজিক মাধ্যম নয়’, ‘যুব সমাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে’—এমন স্লোগান নিয়ে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন।
পুলিশের পদক্ষেপ ও পরিস্থিতি
বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, জলকামান ও লাঠিচার্জ ব্যবহার করে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন সংসদ ভবনের আশপাশে সন্ধ্যা ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নেপালের এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণের প্রবণতার মধ্যে একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, অস্ট্রেলিয়া, সামাজিক মাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নেপালের পরিস্থিতি এই বৈশ্বিক প্রবণতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও তথ্য নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
নেপালের প্রায় ৯০% জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, এবং এই নিষেধাজ্ঞা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
নেপালে সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধকরণ ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতি সরকারের ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ নীতি এবং নাগরিক স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে এসেছে।