Home Second Lead নেপালে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি

নেপালে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি

যুববিদ্রোহের পর প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ

 সামনে সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ

রামেশ ভট্টরায়, কাঠমান্ডু: সপ্তাহব্যাপী সহিংস আন্দোলন ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল শুক্রবার প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন নাগরিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নেপাল পেল তার ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, যিনি এর আগে ২০১৬ সালে প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।
সুশীলা কার্কি

রাষ্ট্রপতি পৌডেল বৃহস্পতিবার থেকে যুব আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে টানা বৈঠক করছিলেন। আলোচনায় অংশ নেন সংসদের স্পিকার, সেনাপ্রধান ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তবে শপথ অনুষ্ঠান বিলম্বিত হয় সংবিধানিক প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে। যুবনেতারা ও কার্কি শর্ত দেন যে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি প্রথমে আপত্তি তুললেও সেনাবাহিনীর জরুরি অবস্থার হুমকি এবং যুবনেতা সুধন গুরুংয়ের কঠোর অবস্থানের মুখে অবশেষে সম্মত হন।

৮-৯ সেপ্টেম্বর দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন দিয়ে শুরু হওয়া যুবপ্রজন্মের বিক্ষোভ কয়েক দিনের মধ্যেই সহিংসতায় রূপ নেয়। দেশজুড়ে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষে অন্তত ৫১ জন নিহত হন। এ পরিস্থিতিতে নতুন নেতৃত্বের দাবিতে চাপ বাড়ে।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান কুলমান ঘিসিংয়ের নামও আলোচনায় ছিল। তবে দুজনই আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বলে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কার্কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান এবং বিচার বিভাগের অভিজ্ঞতার কারণে যুবপ্রজন্মের আন্দোলনের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী ছিলেন।

রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন শীতলনিবাসে বৃহস্পতিবার রাতভর চলে দরকষাকষি। এর আগে সেনা সদর দফতরে আলোচনার আয়োজন করা হলেও রাষ্ট্রপতিকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা তীব্র হয়। এমনকি রাজতন্ত্র পুনর্বহালের গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে।

সুশীলা কার্কির কর্মজীবন নেপালে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ২০১২ সালে তিনি এক মন্ত্রীর দুর্নীতির মামলায় দণ্ড দেন। ২০১৬ সালে দুর্নীতিবিরোধী কমিশনের প্রধানকে অপসারণের রায় দেন। একই বছর একজন সাবেক মাওবাদী সাংসদ ও দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিকে সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার উদ্যোগও আদালতে বাতিল করেন। এসব কারণে তিনি রাজনৈতিক মহলে সমালোচিত হলেও জনসাধারণের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

১৯৫২ সালে বিরাটনগরে জন্ম নেওয়া কার্কি প্রথমে রাজনৈতিক বিজ্ঞান, পরে আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তিনি কারাবরণও করেছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে যোগ দেন এবং ২০১৬ সালে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান।

তবে নতুন দায়িত্বে তার সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। তাকে প্রযুক্তিবিদ, যুবনেতা এবং বিদ্যমান রাজনীতিবিদদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, সেনাবাহিনীর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ এবং ভারত-চীনকে কেন্দ্র করে নেপালের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা তার জন্য বড় পরীক্ষার বিষয় হবে।

নেপালের সাধারণ মানুষ সহিংসতার ধকল কাটিয়ে এখন শান্তির প্রত্যাশা করছেন। যুবনেতারা এটিকে তাদের বিজয় হিসেবে দেখছেন। সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে দেশ একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করল, যেখানে দুর্নীতি দমন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথ প্রশস্ত হওয়ার আশা জাগছে।