Home অন্যান্য নাটোরে লাখো দর্শকের সঙ্গে জীবন্ত হলো আদি বাংলার নৌকাবাইচ

নাটোরে লাখো দর্শকের সঙ্গে জীবন্ত হলো আদি বাংলার নৌকাবাইচ

নৌকাবাইচ্। ছবি সংগৃহীতহ
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, নাটোর: নাটোরের চলনবিলে ফিরল চার দশক আগের সেই নৌকাবাইচের রমরমা উৎসব। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা গ্রামে শুরু হওয়া এই নৌকাবাইচে মিলল আদি বাংলার ছন্দ ও প্রাণ। মেঘলা আকাশ, বিস্তীর্ণ জলরাশি আর হালকা বৃষ্টির ছোঁয়ায় যেন চারপাশে ভেসে উঠেছিল এক স্বপ্নময় দৃশ্য। পানসি নৌকা, বৈঠা আর জলরাশির ছলছল শব্দে জীবন্ত হয়ে ওঠে চলনবিল।

প্রায় ৪০ বছর পর পুনরায় নৌকাবাইচের আয়োজন হওয়ায় বিলের দুই পাড়ে ভিড় জমে মানুষে মানুষ। নাটোর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী বাইচে অংশ নেয় মোট ১২টি পানসি নৌকা। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খেলার ধারা শুরু হয় বিলশার মা জননী সেতু থেকে কাঁটাবাড়ি বিল পর্যন্ত। দর্শকরা ভাসমান নান্দনিক মঞ্চ এবং পানিতে ভেসে থাকা স্থানে বসে এই আয়োজনের সৌন্দর্য ও উত্তেজনা উপভোগ করেন।

বিকেল ৩টায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বাইচের উদ্বোধন করেন। উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগের কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহাম্মদ শাহজাহান, নাটোর জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন ও গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ।

উৎসবের সপ্তম রাউন্ড শেষে ফাইনাল রাউন্ডে ‘নিউ একতা এক্সপ্রেস’ জয়ী হয়, ‘বাঙলার বাঘ’ ও ‘আল মদিনাকে’কে পিছনে ফেলে। প্রথম দলকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দল পায় রেফ্রিজারেটর ও এলইডি টেলিভিশন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ বলেন, “জীবনের প্রথম এতো দর্শকের সামনে নৌকাবাইচ উপভোগ করার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। দর্শকদের উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা বাইচকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।” উদ্বোধনী প্রধান অতিথি সচিব সাইদুর রহমান বলেন, “চলনবিলে বেড়ে ওঠা এবং নৌকায় ভেসে বড় হওয়া এই অভিজ্ঞতা নতুন করে জীবন্ত হলো। এতো দর্শক ও এমন আয়োজন সত্যিই মুগ্ধ করেছে।”

আয়োজকরা দাবি করেছেন, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা থেকে এক লাখের বেশি দর্শক এই গ্রামীণ উৎসবে উপস্থিত হয়েছিলেন। তীব্র বৃষ্টিও তাদের আনন্দের অন্তরায় হতে পারেনি। এভাবেই চলনবিলের আদি বাংলার ঐতিহ্য নতুন করে ফিরিয়ে আনা হলো, যেখানে জল, নৌকা আর মানুষের উচ্ছ্বাস এক হয়ে জন্মাল এক জীবন্ত উৎসব।