প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা নিষেধ, সপ্তাহে দুদিন যেতে পারবেন হাসপাতালে
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোম্পানির প্রতিনিধিরা সপ্তাহে মাত্র দুই দিন—সোমবার ও বৃহস্পতিবার—দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন। এই নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে তারা কোনোভাবে হাসপাতালের সীমানার মধ্যে অবস্থান করতে পারবেন না।
নতুন এই নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পরিপত্রে সব সরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। এতে মোট আটটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের ওপর। নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সাক্ষাতের সময় নিজ নিজ কোম্পানির পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখতে হবে এবং রোগীর কোনো তথ্য সংগ্রহ বা প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারগুলোতে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির ভিড়ে রোগীরা বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছিলেন। রোগীদের অভিযোগ, প্রয়োজনে না থাকা ওষুধ চাপিয়ে দেওয়া, নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ লিখতে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা—এসবই তাদের জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে উঠেছে। অনেক সময় হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে দেখা না করে, শুধু কোম্পানির প্রতিনিধিদের কারণে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ বাধাগ্রস্ত হতো।
নতুন নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে—বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাডে ব্যবস্থাপত্র লেখা যাবে না, হাসপাতালের সরবরাহ থাকা ওষুধ বা পরীক্ষা বাইরে থেকে করানো যাবে না। সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কোনো বেসরকারি সিল ব্যবহার করা যাবে না; তবে বিজ্ঞাপনবিহীন জেনেরিক নামের সিল ব্যবহার করা সম্ভব। বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির সরবরাহ করা ওষুধের তালিকা টেবিলে রাখা যাবে না।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, নতুন বিধি কার্যকর হলে রোগীদের দৈনন্দিন ভোগান্তি কমবে এবং চিকিৎসা পরিবেশ হবে আরও পেশাদার ও নিরাপদ। চিকিৎসকরা বলছেন, “কোম্পানির প্রতিনিধিরা আগে প্রায় সময় চেম্বার বা হাসপাতালের করিডরে দাঁড়িয়ে রোগীর সঙ্গে কথা বলতে বাধা সৃষ্টি করত। নতুন নিয়মে এই অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ অনেকটাই কমবে। রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের জন্য এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ।”
সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়মিতভাবে ওষুধ কোম্পানির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করলে রোগীর সেবা মান উন্নত হবে এবং হাসপাতালের পেশাদার পরিবেশ বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা।