Home সারাদেশ ফেসবুকের প্রেমের ফাঁদে তরুণীর সীমান্ত পেরোনো

ফেসবুকের প্রেমের ফাঁদে তরুণীর সীমান্ত পেরোনো

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, লালমনিরহাট: প্রেমের টানে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভারতের জলপাইগুড়ির তরুণী রিয়া পারভীন রিংকি। কিন্তু বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হওয়া এবং স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তাকে নিজ দেশে ফিরে যেতে হলো।
প্রেম থেকে সীমান্ত পেরোনো

রিয়া ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি থানার পূর্ব দালাইগাঁও চাংমারি গ্রামের আব্দুর রহিমের মেয়ে। ফেসবুকের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার জুম্মাপাড়া এলাকার আমিনুর রহমানের ছেলে রবি ইসলামের সঙ্গে। ধীরে ধীরে অনলাইনের আলাপ গড়ায় প্রেমে, আর প্রেম থেকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে।

রবি ইসলামের আশ্বাসে রিয়া গত ৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে সীমান্ত চোরাকারবারিদের সহায়তায় বিএসএফ ও বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও হতাশার গল্প

পরদিন সকালে রবি তাকে নিজের এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যান। স্থানীয়দের চোখে পড়লে রবি ও রিয়াকে আটক করা হয়। পরে রবির বোন শিখা ও চাচা বাপ্পি ইসলাম বিয়ের কথা বলে তাকে নিজেদের জিম্মায় নেন। কিন্তু এর পরপরই রবি হঠাৎ উধাও হয়ে যান। একপর্যায়ে শিখা রিয়াকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফেরার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) পুলিশ রিয়াকে হেফাজতে নেয়।

পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন

অন্যদিকে, মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর রিয়ার বাবা আব্দুর রহিম ভারতের ময়নাগুড়ি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে দুই দেশের প্রশাসনিক আলোচনার পর শনিবার দুপুরে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে রিয়াকে ভারতের হাতে ফেরত দেওয়া হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিজিবির সুবেদার হাফিজুর রহমান, পাটগ্রাম থানার এসআই শাহাজান আলী ও ইমিগ্রেশন পুলিশের এসআই আশরাফুল ইসলাম। ভারতের পক্ষে ছিলেন বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার সুরেশ শিং গজ্জার, ময়নাগুড়ি থানার আইসিপি সুবল ঘোষ ও ওসি গণেষ মর্ম।

বাবা ও মেয়ের প্রতিক্রিয়া

রিয়ার বাবা আব্দুর রহিম বলেন, “রবি আমার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সীমান্ত পার করায় এবং পরে পালিয়ে যায়। আমার ধারণা, তার উদ্দেশ্য ছিল পাচার।”

ফিরে যাওয়ার সময় চোখ ভেজা কণ্ঠে রিয়া বলেন, “রবির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের আশ্বাসে বাংলাদেশে এসেছিলাম। কিন্তু তার পরিবার আমাকে মেনে নেয়নি। বরং লুকিয়ে রেখে আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমার মতো আর কেউ যেন এমন প্রতারণা ও ভোগান্তির শিকার না হয়।”

এক অসমাপ্ত প্রেমকাহিনি

প্রেমের টানে শুরু হলেও গল্পের শেষ হয়েছে হতাশা, প্রতারণা আর অপমানের মধ্য দিয়ে। রিয়ার প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে এক অসমাপ্ত প্রেমকাহিনির পরিসমাপ্তি ঘটলেও এই ঘটনা সীমান্তপারের প্রেমের ঝুঁকি ও প্রতারণার শিকার হওয়ার বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে তুলল।