হেলথ ডেস্ক:
করাচি: প্লাবিত মুলতানের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে সামান্য আশার আলো দেখছেন শ্রমিক সাজিদ হুসাইন ও তার স্ত্রী সামিনা। তাদের পাঁচ বছরের ছেলে আয়ান দীর্ঘদিন ধরে বিরল এক প্রাণঘাতী হৃদ্রোগে ভুগছিল। সম্প্রতি সফল অস্ত্রোপচারের পর শিশুটি এখন স্বাভাবিক জীবনের পথে হাঁটছে—যা পরিবারটির কাছে একেবারে অলৌকিক মনে হচ্ছে।
আয়ানের বাবা-মা এর আগে একই রোগে চার সন্তানের মৃত্যু দেখেছেন। সামিনা জানান, দীর্ঘদিন পর এখন তার মন শান্ত। “অপারেশনের পর থেকে একবারও অসুস্থ হয়নি। আগে সামান্য অস্বস্তিতেই সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলত, মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যেত, তারপর জ্ঞান হারাত,” বলেন তিনি।
মুলতানের গ্রাম থেকে ২০২৩ সালে পরিবারটি করাচিতে আসে চিকিৎসার আশায়। আয়ানকে প্রথমে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হলেও পরে তাকে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট (NICVD)-এ পাঠানো হয়। সেখানে ধরা পড়ে, শিশুটি মারাত্মক ধরনের লং কিউটি সিন্ড্রোম (LQTS)-এ আক্রান্ত—এক ধরনের জন্মগত হৃদ্স্পন্দনজনিত রোগ।
ডা. মোহাম্মদ মেহসিন জানান, “এ ধরনের রোগীদের হৃদ্যন্ত্র দেখতে স্বাভাবিক হলেও হঠাৎ অনিয়মিত দ্রুত স্পন্দন দেখা দেয়, যার ফলে খিঁচুনি বা আকস্মিক মৃত্যুও হতে পারে।” আয়ান জন্মগতভাবে বধির ও মূক—এটিও রোগটির গুরুতর রূপের অংশ।
চিকিৎসকরা প্রথমে আয়ানের শরীরে ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিয়াক ডিফিব্রিলেটর (ICD) বসান। তবে ঘন ঘন শক হওয়ায় (কখনও দিনে চারবার পর্যন্ত) পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় লেফট কার্ডিয়াক সিমপ্যাথেটিক ডেনার্ভেশন (LCSD) নামের অস্ত্রোপচারের, যা পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো সম্পন্ন হলো।
অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয় NICVD ও আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের (AKUH) যৌথ উদ্যোগে। প্রায় ছয় লাখ রুপির ব্যয় বহন করেছে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ তহবিল ও এক দাতার সহায়তা।
আগা খান বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সেলিম ইসলাম জানান, “পুরো প্রক্রিয়ায় ২১ মিনিট সময় লেগেছে। ৫ মিমি আকারের একটি চেরা ও দুটি ৩ মিমি চেরার মাধ্যমে ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতি প্রবেশ করিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। বিশ্বে কেবলমাত্র কিছু মার্কিন ও কানাডীয় কেন্দ্রে এ অস্ত্রোপচার হয়। তাই প্রতিটি ধাপ খুব সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, সঠিক রোগী নির্বাচন এবং অ্যানেস্থেশিয়া টিমের প্রস্তুতিই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। “এই কেসটি প্রমাণ করে যে জটিল চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই রোগীকে নতুন জীবন দিতে পারে,” যোগ করেন তিনি।
দুর্যোগে ভেসে যাওয়া জীবনে আয়ান এখন পরিবারের নতুন ভরসা। সামিনা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “এই দুঃসময়ে আমাদের একমাত্র শক্তি আয়ান। আমরা শুধু চাই, সে সুস্থ জীবন যাপন করুক।”