রামেশ ভট্টরায়, কাঠমান্ডু: দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংস আন্দোলনের পর নেপালে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সুশিলা কার্কি। গত ১২ সেপ্টেম্বর তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি ঘোষণা দেন—তাঁর সরকার ছয় মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকবে না এবং আগামী বছরের মার্চে নির্ধারিত নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়াই হবে মূল লক্ষ্য।
আন্দোলনের পটভূমি
সেপ্টেম্বরের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধ করা এবং ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি, বেকারত্ব ও বৈষম্যের কারণে তরুণদের নেতৃত্বে “Gen Z আন্দোলন” দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে সরকারি ভবন, সংসদ ভবন, প্রেসিডেন্টের দপ্তর এমনকি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত হামলার শিকার হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত ৭২ জন নিহত এবং হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
প্রবল চাপের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
নতুন সরকারের ঘোষণা
কার্কি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বার্তাতেই শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি নিহতদের পরিবারকে প্রতিজনকে এক মিলিয়ন নেপালি রুপি ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহনের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবকাঠামো ও সরকারি ভবনগুলো পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনাও সামনে এনেছেন।
আন্দোলনকারীদের মনোভাব
“Gen Z আন্দোলন”কারীরা মনে করছে শুধু নেতৃত্ব বদল নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা এবং স্বচ্ছ রাজনৈতিক সংস্কার দরকার। তারা একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি তুলেছে, যাতে বিগত সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা যায়।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তরুণরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধকরণ ছিল কেবল উসকানি; তাদের প্রকৃত ক্ষোভ জমে ছিল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক স্থবিরতা, স্বজনপ্রীতি, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আপাতত আস্থা রেখেছে প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পোদেল ও সেনাবাহিনী। আন্তর্জাতিক মহলও বলছে, নেপাল এখন এক মোড় ঘোরানো মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—ছয় মাসের মধ্যে কি সত্যিই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে?
চ্যালেঞ্জ সামনে
- ধ্বংস হয়ে যাওয়া সরকারি ও বাণিজ্যিক অবকাঠামো পুনর্গঠন
- দুর্নীতিবিরোধী কার্যকর পদক্ষেপ
- রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরি
- আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন ধরে রাখা
- সাধারণ মানুষের জীবনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কার্কির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনআকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করা। জনগণ দ্রুত পরিবর্তন দেখতে চাইছে—কেবল নেতৃত্ব নয়, প্রতিষ্ঠানগত সংস্কারও তাদের দাবি। যদি সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে তবে আন্দোলনকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু ব্যর্থ হলে নেপাল আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতার গভীরে নিমজ্জিত হতে পারে।










