আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানে নারীর শিক্ষা ও মতপ্রকাশের ওপর নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করল তালেবান সরকার। দেশটির উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে আর কোনো নারী লেখকের লেখা বই রাখা যাবে না। এর অংশ হিসেবে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি এবং সিলেবাস থেকে শত শত বই সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, তালেবান কর্তৃপক্ষ মোট ৬৭৯টি বই নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে ১৪০টির লেখক নারী। একই সঙ্গে প্রায় ৩১০টি বই ইরানি লেখক বা প্রকাশকের লেখা হওয়ায় সেগুলোও বাদ দেওয়া হচ্ছে। তালেবানের দাবি, এসব বই শরীয়াহ আইনের পরিপন্থী এবং ইসলামী আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
নিষিদ্ধ বইগুলোর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার, নারী অধিকার, পশ্চিমা রাজনৈতিক চিন্তাধারা, ইসলামি রাজনীতি ও সামাজিক সংস্কার সম্পর্কিত নানা গ্রন্থ। বিশেষত নারীর স্বাধীনতা, সমঅধিকার ও নারীবাদ নিয়ে লেখা বহু বই চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ তালিকায় রাখা হয়েছে।
তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটি বিশেষ কমিটি—যার সদস্য হিসেবে ধর্মীয় পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞরা থাকবেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম ও কোর্সে ব্যবহৃত প্রতিটি বই খতিয়ে দেখবে। শরীয়াহবিরোধী বা “বিদেশি প্রভাব” বহনকারী যেকোনো গ্রন্থ অবিলম্বে বাতিল করা হবে। ফলে লাইব্রেরি থেকে শুরু করে পাঠ্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শঙ্কা, এত বিপুলসংখ্যক বই নিষিদ্ধ হয়ে গেলে পাঠ্যক্রমে ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় জ্ঞানচর্চা থেকে বঞ্চিত হবে, বিশেষত নারীদের লেখা ও নারী-সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
মানবাধিকারকর্মী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, তালেবানের এ সিদ্ধান্ত নারী শিক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ভয়াবহ আঘাত। এর ফলে একদিকে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হবে, অন্যদিকে নারী লেখকদের অস্তিত্বকেও মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এই পদক্ষেপ আফগানিস্তানকে আরও একধাপ পিছিয়ে নেবে এবং দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গোপনে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। তালেবান সরকার কড়া ভাষায় সতর্ক করেছে—যে কেউ এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক মহল এখন নজর রাখছে আফগানিস্তানের ওপর। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তালেবানকে আহ্বান জানিয়েছে, নারী শিক্ষার ওপর আরোপিত এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য। তবে তালেবান নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্তে অনড়।