Home স্বাস্থ্য সাধারণ বালিশেই ভয়ঙ্কর ক্ষতি: গবেষণায় নতুন চাঞ্চল্য

সাধারণ বালিশেই ভয়ঙ্কর ক্ষতি: গবেষণায় নতুন চাঞ্চল্য

হেলথ ডেস্ক: প্রতিদিনের ব্যবহার করা সাধারণ বালিশই মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এক নীরব ঘাতক। জাপানের টোকিও স্পাইন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. তানাকা দীর্ঘ ২৫ বছরের গবেষণায় জানিয়েছেন, ঘুমের সময় গলা ও কাঁধের সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ ট্রাপিজিয়াস পেশি কখনো বিশ্রাম পায় না, বরং সারারাত ধরে থাকে চরম টেনশনে। তাঁর ভাষায়, “কেউ দিনের বেলা টানা আট ঘণ্টা গলা বাঁকা করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। অথচ প্রতিরাতে সাধারণ বালিশে ঘুমিয়ে শরীরকে সেই অবস্থায় রাখা হয়।”

ব্যথার ভয়ঙ্কর ধারা

গবেষণায় উঠে এসেছে, এই টেনশন কেবল গলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। একে একে তা ছড়িয়ে পড়ে কাঁধ ও উপরের পিঠে। এই প্রক্রিয়াকে তিনি বলেছেন “পেইন ক্যাসকেড ইফেক্ট”। প্রথমে গলার পেশি শক্ত হয়ে যায়, এরপর কাঁধে, আর শেষে গোটা পিঠে এক জালের মতো ব্যথা তৈরি করে। শুধু তাই নয়, বিশেষ রক্তপ্রবাহ ইমেজিং ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেছেন, এই টান দীর্ঘস্থায়ী হলে গুরুত্বপূর্ণ পেশিগুলোতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফলাফল—অসহনীয় ব্যথা, দৈনন্দিন জীবনে ক্লান্তি, এমনকি বয়সের আগেই পেশি নিস্তেজ হয়ে পড়া।

মাইগ্রেন ও স্নায়বিক সমস্যা

সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো—সাধারণ বালিশ ব্যবহারের কারণে মাইগ্রেন ও গুরুতর স্নায়বিক জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শুধু মাথাব্যথাই নয়, এর সঙ্গে মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখা, বমি ভাব, আলো সহ্য করতে না পারা—এসব লক্ষণও ধরা পড়ে। তানাকার মতে, “ভুল বালিশ শুধু ব্যথা তৈরি করে না, এটি ভয়ঙ্কর নিউরোলজিক্যাল সমস্যা উসকে দেয়।”

চিকিৎসা শিল্পের বাণিজ্য

তাঁর দাবি, চিকিৎসা শিল্প এই সমস্যাকে কেন্দ্র করেই গড়ে তুলেছে এক বিশাল অর্থনৈতিক চক্র। কায়রোপ্র্যাক্টরের কাছে প্রতিবার যাওয়ার খরচ ৬০–১২০ ইউরো। বছরে গড়ে ব্যয় দাঁড়ায় ৩,০০০–৬,০০০ ইউরো। বয়স বাড়ার সঙ্গে খরচও বাড়তে থাকে। আজীবনে একজন মানুষকে এ জন্য খরচ করতে হয় প্রায় ১.৫ লাখ ইউরো, অথচ মূল কারণ—বালিশ—থেকে যায় অক্ষত।

নতুন সমাধান: ডেরিলা এরগো পিলো

এই অবস্থার পরিবর্তনে ডা. তানাকা প্রাচীন জাপানি রিফ্লেক্সোলজি ও আধুনিক ঘুমবিজ্ঞান মিলিয়ে তৈরি করেছেন ডেরিলা এরগো পিলো। বালিশটির বৈশিষ্ট্য হলো—

  • ঘাড়ের প্রাকৃতিক বাঁক ঠিক রাখা
  • সঠিক প্রেশার পয়েন্টে চাপ দেওয়া
  • মেরুদণ্ড সোজা রাখা
  • সারারাত ধরে টান ধীরে ধীরে মুক্ত করা

ঘুম পরীক্ষায় দেখা গেছে, কয়েক রাত ব্যবহারের পরই পেশির টান কমতে শুরু করে। পঞ্চম সপ্তাহে গভীর ঘুমের সময় বেড়ে যায় প্রায় ৪৭ শতাংশ, পেশির টেনশন কমে ৬৮ শতাংশ। নবম সপ্তাহে স্বাভাবিকভাবে মেলাটোনিন উৎপাদন ফিরে আসে এবং সকালের ব্যথাহীন সতেজ ঘুম ফিরে পাওয়া যায়।

সতর্কবার্তা

ডা. তানাকা সতর্ক করেছেন—“প্রতিদিন সাধারণ বালিশ ব্যবহার মানে শরীরের ক্ষতিকে প্রতিরাতে নতুন করে রিসেট করা। যত দ্রুত সঠিক সাপোর্ট দেওয়া যায়, তত দ্রুত আরোগ্যের সম্ভাবনা।”