Home পরিবেশ শ্মশানঘাটে অজগর সাপ: বনসংরক্ষণ ও মানুষের সহাবস্থানের চ্যালেঞ্জ

শ্মশানঘাটে অজগর সাপ: বনসংরক্ষণ ও মানুষের সহাবস্থানের চ্যালেঞ্জ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে শ্মশানঘাট এলাকায় গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ধরা পড়েছে প্রায় ১৪ ফুট লম্বা ও ২৪–২৫ কেজি ওজনের একটি বিশাল অজগর সাপ। জেটি রোডের দেবনাথ শ্মশান প্রাঙ্গণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলাকালীন শ্রমিকরা সাপটি দেখতে পান এবং আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। বিষয়টি স্থানীয়রা বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের (বিডব্লিউএফ) কর্মকর্তাদের জানান। পরে ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল ও পরিবেশকর্মী রাজদীপ দেব দীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে অজগরটির উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।

স্বপন দেব সজল জানান, এটি প্রাপ্তবয়স্ক একটি অজগর, ওজন প্রায় ২৪–২৫ কেজি। নিরাপদে উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল বন বিভাগের রেঞ্জ কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বন ও ঝোপঝাড়ে সাপের স্বাভাবিক আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্যের সংকটের কারণে মাঝে মাঝে এ ধরনের বন্যপ্রাণী মানুষের বসত এলাকায় প্রবেশ করছে।

পরিবেশগত প্রেক্ষাপট:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অজগর সাধারণত নিরীহ প্রাণী এবং মানবের প্রতি আক্রমণাত্মক নয়। তবে হঠাৎ মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি হলে আতঙ্ক তৈরি হয়। শ্রীমঙ্গলের এই ঘটনা একবারে স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, তবে কোনো আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

এ ধরনের ঘটনা পরিবেশগত ও বাস্তুসংস্থানগত দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের দিকে ইঙ্গিত করে:
১. আবাসস্থলের ক্ষয়: বনাঞ্চল ও ঝোপঝাড়ে অবৈধ স্থাপনা, বনকাটা ও সম্প্রসারণের ফলে অজগরের প্রাকৃতিক আবাসস্থল কমে যাচ্ছে।
২. খাদ্য সংকট ও মানব–প্রাণী সংঘাত: খাদ্যের অভাব এবং বাস্তুসংস্থানের ক্ষতির কারণে অজগর ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী মানুষের বসত এলাকায় প্রবেশ করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, এমন পরিস্থিতিতে মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা বন বিভাগকে অবিলম্বে জানানো উচিত। এটি শুধু মানুষের নিরাপত্তা নয়, বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

মৌলভীবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “আমরা মাঝে মাঝে বনাঞ্চল থেকে সাপ বা অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখছি। এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়, কিন্তু আমাদের এবং সাপের উভয়ের নিরাপত্তার জন্য সতর্ক থাকা জরুরি।”

পরিবেশবিদরা আরও সতর্ক করে বলেন, “মানব–বন্যপ্রাণী সংঘাত প্রতিরোধ করতে হলে স্থানীয় বনাঞ্চল ও সাপের স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি ও সাপ উদ্ধার সংক্রান্ত নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।”

এই ঘটনায় আবারও দেখা গেলো, মানুষের দ্রুত বিস্তার, বনাঞ্চলের হ্রাস এবং খাদ্য সংকট একত্রিত হয়ে মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে। এটি শুধু শ্রীমঙ্গল নয়, পুরো মৌলভীবাজার অঞ্চলের বনভূমি ও মানুষের সহাবস্থানের চ্যালেঞ্জেরই একটি ছবি।