একান্ত সাক্ষাৎকারে ওয়ান টিম প্যানেলের প্রধান
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ব্যবসায়ী অঙ্গনে এখন প্রাণচাঞ্চল্য। এই নির্বাচনে ওয়ান টিম প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশের খ্যাতিমান শিল্পোদ্যোক্তা মোহাম্মদ আমিরুল হক। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসা তিনি আজ দেশের অন্যতম সফল শিল্পনেতা হিসেবে পরিচিত। সিকম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস পিএলসির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি শুধু সিমেন্ট বা এলপিজিতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং শিপিং, ভোজ্যতেল শোধনাগার, চিংড়ি হ্যাচারি, ব্যাগ ও ব্যাগ উৎপাদন থেকে শুরু করে রিয়েল এস্টেট—প্রায় প্রতিটি খাতেই রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর।
শুধু ব্যবসায়ী নেতৃত্বই নয়, তিনি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক এবং দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই-এর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ইংল্যান্ডে স্নাতকোত্তর শিক্ষা শেষে তিনি দেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে সক্রিয় নীতিনির্ধারক হিসেবে গণমাধ্যমে চিন্তাশীল মতামত দিয়ে আসছেন।
দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে একাধিকবার সিআইপি নির্বাচিত করেছে। একই সঙ্গে তিনি একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তক, সমাজসেবক ও দাতব্যকর্মী। তিনি সবসময় দেশের মানুষের পাশে থেকে কাজ করে আসছেন।
আজকের এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে আমরা জানব চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন নির্বাচনে ওয়ান টিম প্যানেলকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কী ভিশন সামনে আনছেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় তাঁর অঙ্গীকার কী, এবং চেম্বারের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে তিনি কীভাবে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চান। বৃৃৃৃৃৃহস্পতিবার সকালে বিজনেসটুডে২৪ কে তিনি তাঁর সামার হিলের বাসভবনে একান্ত সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন।
প্রশ্ন ১: ওয়ান টিম প্যানেল নিয়ে আপনার মূল লক্ষ্য কী?
মোহাম্মদ আমিরুল হক: আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট—চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজকে এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ করা। এতদিন চেম্বার বিভক্ত, অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত থেকেছে। কিন্তু ব্যবসার স্বার্থে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা ওয়ান টিম নাম দিয়েছি কারণ আমরা দল-মত-গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে গিয়ে ঐক্য চাই। আমার বিশ্বাস, একটি ঐক্যবদ্ধ চেম্বারই বন্দর, কাস্টমস, অবকাঠামো এবং শিল্পোন্নয়নের বড় সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে।
প্রশ্ন ২: চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী এবং আপনি সমাধান কীভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ আমিরুল হক: বন্দরের সমস্যা আসলে দ্বিমুখী। একদিকে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, অন্যদিকে প্রশাসনিক জটিলতা। বে-টার্মিনাল এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, ফলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চাপ বাড়ছে। আবার কাস্টমসের ধীরগতি ও জটিলতা ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়াচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হবে সরকারের সঙ্গে সরাসরি সমন্বয় তৈরি করে দ্রুত বে-টার্মিনালের কাজ শেষ করা, বন্দরের ডিজিটালাইজেশন বাড়ানো এবং কাস্টমস প্রক্রিয়া আরও সহজ করা। যদি আমরা একাজগুলো করতে পারি, তাহলে আমদানি-রপ্তানিতে ২০–৩০% খরচ কমবে।
প্রশ্ন ৩: ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা প্রায়ই অভিযোগ করেন, চেম্বার কেবল বড় শিল্পপতিদের মুখপাত্র। এ নিয়ে আপনার মত কী?
মোহাম্মদ আমিরুল হক: এটা দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (এসএমই) চেম্বারের মূলস্রোতের বাইরে ছিলেন। অথচ দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড তারাই। আমরা ওয়ান টিমের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলছি, এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা উইং তৈরি করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সাপোর্ট সেল থাকবে। আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক ঋণ, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার। আমি চাই, গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও যেন মনে করেন চেম্বার তাঁরও প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন ৪: রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে চেম্বার নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছে। আপনি কীভাবে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবেন?
মোহাম্মদ আমিরুল হক: আমি সবসময় বিশ্বাস করি, ব্যবসার সংগঠনকে রাজনীতির হাত থেকে দূরে রাখতে হবে। ব্যবসার স্বার্থে আমরা সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ করবো, কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের ছায়ায় থাকবো না। আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো—চেম্বার হবে কেবল ব্যবসায়ীদের জন্য, ব্যবসার স্বার্থে। এজন্য আমরা গঠনতন্ত্র সংশোধনের কথাও ভাবছি, যাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ না থাকে। ব্যবসার প্রশ্নে আমরা কেবল চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজকেই ম্যান্ডেট হিসেবে গ্রহণ করবো।
প্রশ্ন ৫: আপনার প্যানেলের বিশেষ পরিকল্পনা কী, যা আপনাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে?
মোহাম্মদ আমিরুল হক: আমরা কেবল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না, বরং বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছি। যেমন—
১) বন্দর-কাস্টমস সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন।
২) চট্টগ্রামে বিনিয়োগবান্ধব ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার।
৩) নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্যোক্তা তহবিল।
৪) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সব সদস্যের ব্যবসায়িক ডাটাবেস তৈরি।
৫) বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ইনভেস্টমেন্ট রোডশো আয়োজন।
আমরা চাই চেম্বারকে আন্তর্জাতিক মানের কর্পোরেট সংগঠনে রূপান্তরিত করতে।
প্রশ্ন ৬: নির্বাচনে জিতলে ব্যবসায়ী সমাজ কী পরিবর্তন দেখতে পাবে?
মোহাম্মদ আমিরুল হক : আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, চেম্বার আর নিছক প্রথাগত সংগঠন থাকবে না। ব্যবসায়ীরা দেখবেন—
- তাঁদের সমস্যা দ্রুত শুনে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
- ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব উদ্যোক্তা সমান গুরুত্ব পাচ্ছেন।
- সরকারের সঙ্গে দরকষাকষিতে চেম্বার শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চট্টগ্রাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হবে বিশ্বাসের জায়গায়। ব্যবসায়ী সমাজ আবার বিশ্বাস করবে—চেম্বার সত্যিই তাঁদের সংগঠন, তাঁদের কণ্ঠস্বর। আর সেটিই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।