Home আন্তর্জাতিক ভিয়েতনামে কম নির্গমন কৃষি উৎপাদন: নতুন কৌশল

ভিয়েতনামে কম নির্গমন কৃষি উৎপাদন: নতুন কৌশল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ ও বৈশ্বিক বাজারের চাহিদার কারণে কম নির্গমন কৃষি উৎপাদন এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। ভিয়েতনাম সরকার ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্য নির্গমন অর্জনের নীতি গ্রহণ করেছে এবং এর অংশ হিসেবেই কৃষি খাতে কম নির্গমন উৎপাদন জোরদার করা হচ্ছে।

ভিন লং প্রদেশের ফাত তাই এগ্রিকালচারাল কোঅপারেটিভ ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে ৪৮.৪ হেক্টর জমিতে ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অব ওয়ান মিলিয়ন হেক্টর হাই-কোয়ালিটি, লো-এমিশন রাইস কাল্টিভেশন’ প্রকল্পের অধীনে ওএম ৫৪৫১ ধানের আবাদ শুরু করে। প্রায় ৫০ পরিবার এতে অংশ নেয়। বিকল্প সেচ পদ্ধতি, সঠিক সার ব্যবস্থাপনা, বীজ ও কীটনাশকের যৌক্তিক ব্যবহার, খড়ের কার্যকর ব্যবস্থাপনার মতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কৃষকদের। এর ফলে বীজের ব্যবহার প্রথাগত পদ্ধতির তুলনায় অর্ধেকেরও বেশি কমে যায়, খরচ হ্রাস পায়, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং সর্বোপরি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।

কৃষি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্ল্যান্ট প্রোডাকশন অ্যান্ড প্রোটেকশন ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক নুয়েন থি থু হুং জানান, বিকল্প ভেজানো-শুকানো সেচ (AWD), সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, জৈবচাষ, নির্ভুল কৃষি ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষির মতো পদ্ধতি গ্রহণে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সেচ জলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এতে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি কৃষকের আয় গড়ে ১০–২০% বেড়েছে। বিশেষভাবে, এই মডেলগুলোয় মিথেন নির্গমন ৩০–৪৫% কমেছে, সেচ জলের ব্যবহার ২০–৩০% কমেছে এবং সার ও বীজ সাশ্রয়ে খরচ ৫–১০% হ্রাস পেয়েছে।

শুধু ধান নয়, ভুট্টা, ক্যাসাভা, সয়াবিন, শাকসবজি ও ফলমূলের ক্ষেত্রেও কম নির্গমন পদ্ধতি প্রয়োগের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। সাবেক কৃষি উপমন্ত্রী লে কুয়ক দোয়ান বলেন, “এ ধরনের মডেল শুধু অর্থনৈতিক সুবিধাই দিচ্ছে না, বরং ভিয়েতনামকে স্বেচ্ছা ও বাধ্যতামূলক কার্বন ক্রেডিট বাজারে অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করছে।”

কৃষি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, কৃষিজ নির্গমনের প্রায় ৮০% ফসল চাষ থেকে আসে, যার মধ্যে ধান চাষে মিথেন নির্গমন প্রধান উৎস। বর্তমানে এ খাতে বিভিন্ন ক্ষুদ্র প্রকল্প চালু থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে সুসংগঠিত কৌশল, আর্থিক প্রণোদনা ও মানসম্মত নীতি কাঠামোর অভাব রয়েছে। নির্ভুলভাবে নির্গমন পরিমাপ ও প্রতিবেদন করার মতো ব্যবস্থা না থাকায় কার্বন ক্রেডিট ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে।

এ প্রেক্ষাপটে সরকার ২০২৫–২০৩৫ সময়কালের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ফসল চাষ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমপক্ষে ১০% হ্রাস করা এবং ২০২০ সালের তুলনায় মিথেন নির্গমন ৩০% কমানো। পরিকল্পনায় অন্তত ১৫টি কম নির্গমন উৎপাদন এলাকা স্থাপন, ধান, ভুট্টা, কফি, মরিচ, কলা, সাইট্রাস ফল ও অন্যান্য শিল্প ফসলের জন্য পাঁচটি প্রযুক্তি প্যাকেজ তৈরি, এবং জাতীয় পর্যায়ে এমআরভি (পরিমাপ, প্রতিবেদন ও যাচাইকরণ) ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

বিশ্বের প্রধান কৃষি বাজারগুলো কার্বন নির্গমন, স্থায়িত্ব সনদ, পণ্য ট্রেসেবিলিটি ও পরিবেশ সুরক্ষার মান কঠোর করছে। তাই বিলম্ব হলে ভিয়েতনামের কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানিতে সমস্যা তৈরি হবে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ কারণে কৃষি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় দ্রুত প্রধান ফসলের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন পর্যালোচনা করছে এবং জাতীয় পর্যায়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কৌশল প্রণয়নের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে।