বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি: পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়িতে টানা কয়েকদিনের অবরোধ পরিস্থিতিকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া অস্থিরতা প্রশমনে প্রথমবারের মতো সরকার ও আন্দোলনকারী সংগঠন ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র মধ্যে সরাসরি আলোচনা শুরু হয়েছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এ বৈঠককে স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ৮ দফা দাবি মানার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত রাখা হয়েছে—অবরোধ প্রত্যাহার করলে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ধর্ষণকাণ্ডে পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুচিকিৎসার আশ্বাসও দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল গণমাধ্যমকে জানান, উপদেষ্টার মধ্যস্থতায় যে সংলাপ শুরু হলো, সেটি পাহাড়ে চলমান উত্তেজনা নিরসনে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা মঙ্গলবার গুইমারার রামসুবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে সহায়তা বিতরণ করবেন।
অন্যদিকে, ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ তাদের ফেসবুক পেজে বৈঠককে স্বাগত জানালেও সতর্ক ভাষায় জানিয়েছে, মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে আন্দোলন থামবে না। তারা লিখেছে, “আমাদের আন্দোলন কোনো খালি কথায় স্তিমিত হবে না। ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারসহ বাস্তব পদক্ষেপ আমরা চাই।”
বৈঠকে সংগঠনটির ছয় প্রতিনিধি অংশ নেন, যাদের মধ্যে বাগীস চাকমা, ছদক চাকমা, কৃপায়ন ত্রিপুরা, পিন্টু তালুকদার, তোশিতা চাকমা ও মনিকা চাকমার নাম নিশ্চিত হয়েছে। তবে বৈঠকের পর রাতে রাঙ্গামাটিতে দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা সাংবাদিকদের জানান, আলোচনায় অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা নিজেদেরকে ‘ইউপিডিএফ’ সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এই মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানায় জুম্ম ছাত্র-জনতা, এবং একে “অপমানজনক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” আখ্যা দেয়।
পাহাড়ের এই অস্থিরতার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার রাতের এক ভয়াবহ ঘটনায়। প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক স্কুলছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হযেছে বলে অভিযোগকে কেন্দ্র করে। অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে পুরো এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে। এরপর থেকেই জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়, যা এখনও চলমান।
বর্তমানে জেলার সদর ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। তবে সোমবারের সংলাপকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে আশার সঞ্চার হয়েছে যে—দীর্ঘদিনের পাহাড়ি জনপদের আন্দোলন-সংকট এক নতুন আলোচনার পথ খুলে দিতে পারে।
খাগড়াছড়িতে তৃতীয় দিন ধরে বলবৎ রয়েছে ১৪৪ ধারা। এ অবস্থায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জুম্ম ছাত্র-জনতার সড়ক অবরোধ শিথিল থাকলেও জেলায় চলছে না কোনো অভ্যন্তরীণ বা দূরপাল্লার যানবাহন।
এদিকে, খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় হামলা, ভাংচুর এবং রামগড়ে বিজিবির ওপর হামলার ঘটনায় এখনও কোনো মামলা করা হয়নি।