Home First Lead গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজ আটক করছে ইসরায়েল

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজ আটক করছে ইসরায়েল

সংগৃহীত ছবি

৩৭ দেশের ২ শতাধিক অধিকারকর্মী আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  গাজার দিকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ৫০টির মধ্যে ১৩টি জাহাজ ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে। এই বহরে প্রায় ৫০০ জন যাত্রী । তাদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যান্ডেলা ম্যান্ডেলা, ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা রয়েছেন। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে গ্রেটা থুনবার্গ সুস্থ ও নিরাপদ আছেন।

ইসরায়েলি বাহিনী ফ্লোটিলার জাহাজগুলোকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক করে এবং আশদাদ বন্দরে নিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফ্লোটিলা তাদের অবরোধ ভঙ্গ করেছে এবং আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। তবে ফ্লোটিলার সদস্যরা তাদের মানবিক উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার অধিকার দাবি করেছেন।

আটক করার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তুরস্ক ইসরায়েলের পদক্ষেপকে “সন্ত্রাসী আক্রমণ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। কলম্বিয়া দুইজন নাগরিকের আটক হওয়ার পর ইসরায়েলের কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে এবং একটি বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেছে। মালয়েশিয়া আটজন নাগরিকের আটক হওয়ার প্রতিবাদে মানবিক সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, ফ্লোটিলা ইসরায়েলের জন্য কোনো হুমকি নয় এবং স্পেন তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ফ্লোটিলার সদস্যরা দাবি করেছেন, তারা মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার অধিকার রাখে, তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের অবৈধ বলে অভিহিত করেছে এবং কিছু সদস্যের হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ তুলেছে। ফ্লোটিলার সদস্যরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনা ২০১০ সালের গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলার হামলার পুনরাবৃত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক জলসীমায় তুর্কি জাহাজে হামলা চালিয়ে ১০ জন নিহত হয়েছিল।

গাজার দিকে ত্রাণ পাঠানোর এই মানবিক প্রচেষ্টা ইসরায়েলের অবরোধের মুখে পড়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবু কাশেক ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত একটি ‘মিশন আপডেট’-এ জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী সমুদ্রপথে ১৩টি আন্তর্জাতিক জাহাজ আটক করেছে।

আবু কাশেকের তথ্য অনুযায়ী, আটক জাহাজগুলোতে মোট ৩৭টি দেশের ২০১ জনের বেশি মানুষ ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক ছিলেন: স্পেনের ৩০ জন, ইতালির ২২ জন, তুরস্কের ২১ জন এবং মালয়েশিয়ার ১২ জন। তবে বাংলাদেশের অধিকারকর্মী শহিদুল আলম ওই তালিকায় আছেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

মুখপাত্র আবু কাশেক জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পরও তাদের ‘মিশন চলছে’ এবং জাহাজগুলো গাজার অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রায় ৩০টি জাহাজ এখনও দখলদার বাহিনীর সামরিক জাহাজগুলোর ঘেরাটোপের মধ্য দিয়ে লড়াই করে এগিয়ে যাচ্ছে গাজার উপকূলের দিকে।

তিনি বলেন, “আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের প্রেরণা উজ্জীবিত এবং আমরা নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছি এই অবরোধ ভেঙে ভোরের আগেই একসঙ্গে গাজার উপকূলে পৌঁছাতে।”