পানের দোকানদারও হলেন ব্যাংকার, সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্য
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের এস আলম গ্রুপ কর্তৃক পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা এবং ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিলের আহ্বান জানানো হয়।
ব্যবসায়ী মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন হকস বে-এর চেয়ারম্যান ও বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক এবং বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত এটি দেশের সেরা ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হয়ে এসেছে। এই ব্যাংক প্রায় ৬ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্স আনয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এটি ব্যবসায়িক সকল দিক থেকে সফল ছিল এবং বিশ্বের সেরা ১০০০ ব্যাংকের তালিকায় স্থান পেয়েছিল।
বক্তাদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপ “স্বৈরাচারী সরকারের” সাথে যোগসাজশ করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এমডিকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করায়। তারা বোর্ডের সকল সদস্যকে বিতাড়িত করে নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে বোর্ড গঠন করে এবং এমডি সহ ঊর্ধ্বতন সকল পদে নিজেদের অনুগতদের নিয়োগ দেয়, এমনকি তাদের পিএসকেও ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের মতো পদে বসায়। এরপর তারা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা থেকে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সরিয়ে বাইরে থেকে অযোগ্য ও অনুগত ব্যাংকারদের নিয়োগ দেয়।
তারা আরও অভিযোগ করেন যে, এস আলম ব্যাংক দখলের পর শুধুমাত্র নিজের গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট) খুলতে দিত এবং টাকা পাচার করে কৃত্রিম ডলার সংকট তৈরি করে। তারা বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের আর্থিক যোগান বন্ধ করে দেয় এবং কোন রকম চেক বা ভাউচার ছাড়া সাদা স্লিপে বস্তা বস্তা টাকা ব্যাংকের ভল্ট থেকে নিয়ে এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করে, যার ফলে ইসলামী ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়ে। এই অনিয়মের কারণে অনেক ভালো গ্রাহক ইসলামী ব্যাংক ছেড়ে চলে গেছেন এবং ব্যাংকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের মানবসম্পদকেও দুর্বল করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। তারা কোন বিজ্ঞাপন বা পরীক্ষা ছাড়াই মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পানের দোকানদার, গৃহকর্মী, অটোচালক, রাজমিস্ত্রির সহকারী এবং সাম্পানের রং মিস্ত্রিসহ বিভিন্ন শ্রেণির অশিক্ষিত ও অর্ধ্বশিক্ষিত ৮,৩৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। এদের মধ্যে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি শুধু পটিয়ার এবং প্রায় সাড়ে সাত হাজার চট্টগ্রামের প্রার্থী। এদের অনেকে ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে ব্যাংকে যোগদান করেছে এবং কিছু ভুয়া সার্টিফিকেটধারীকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এই অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পেছনে ব্যাংকের বছরে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হচ্ছে, যা গত ৭ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বক্তারা জানান, ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার এখনও এস আলমের মালিকানায় রয়ে গেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক জব্দ করে রাখলেও কেন তা লিকুইডেশন করে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করা হচ্ছে না তা তাদের বোধগম্য নয়। তারা আশঙ্কা করছেন যে, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক শক্তির সহায়তায় এস আলম আবারও ব্যাংক দখল ও লুটপাট করতে পারে।
বক্তারা উল্লেখ করেন, “স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার দোসর এস আলম” পালানোর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করেনি। সম্প্রতি ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিশেষ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়া হলে অধিকাংশ কর্মকর্তা নিজেদের অযোগ্যতা ধরা পড়ার ভয়ে তা বয়কট করে ব্যাংকের অবাধ্যতা প্রকাশ করেন। বক্তারা অবিলম্বে ইসলামী ব্যাংক থেকে সকল অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের দাবি জানান এবং হুঁশিয়ারি দেন যে, দাবি মানা না হলে ব্যবসায়ী সমাজ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও সহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা নতুন নিয়োগ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মেধাবী প্রার্থীদের নিয়োগের আহ্বান জানান।
দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এবং ইসলামী ব্যাংকের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে বক্তারা নিম্নলিখিত দাবিগুলো তুলে ধরেন:
- ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলমের অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তাকে অতিসত্ত্বর বহিষ্কার করতে হবে এবং মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
- ইসলামী ব্যাংকসহ ব্যাংকিং সেক্টরের লুটকৃত ও পাচারকৃত সকল অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
- বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জব্দকৃত এস আলমের সকল শেয়ার অবিলম্বে লিকুইডেশন করে ব্যাংকের দায় শোধ করতে হবে এবং পূর্বের পরিচালনা পরিষদের হাতে ব্যাংকের মালিকানা ফেরত দিতে হবে।
- এস আলমের ঋণের বিপরীতে প্রদত্ত সিকিউরিটি এবং আদালতের মাধ্যমে অ্যাটাচমেন্ট করা সম্পদ একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে বিক্রি করে ব্যাংকের দায় শোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।