Home Second Lead রামগঞ্জে মা-মেয়েকে জবাই করে হত্যা, অর্ধকোটি টাকার মালামাল লুট

রামগঞ্জে মা-মেয়েকে জবাই করে হত্যা, অর্ধকোটি টাকার মালামাল লুট

নৃশংস হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত লক্ষ্মীপুর

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: রামগঞ্জ উপজেলায় ঘটে গেছে এক শিহরণ জাগানো হত্যাকাণ্ড। উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উত্তর চন্ডিপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের স্ত্রী জুলেখা বেগম (৫৫) ও কলেজপড়ুয়া মেয়ে তানহা আক্তার মীম (২০)-কে নিজ ঘরে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে ঘর থেকে ত্রিশ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল লুটে নিয়ে গেছে তারা।

ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে রাতেই সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। চারদিকে শোক ও আতঙ্কের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়।

ঘরের দরজা খোলা, ভিতরে গলাকাটা মরদেহ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত জুলেখা বেগমের স্বামী মিজানুর রহমান রামগঞ্জের সোনাপুর বাজারে ক্রোকারিজের ব্যবসা করেন। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসা শেষে বাড়ি ফিরে আসেন তাদের ছেলে ফরহাদ হোসেন রাব্বী। ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ভেতরে ঢুকে তিনি মা ও বোনের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। মুহূর্তেই তার আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ওই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

বিয়ের প্রস্তুতি, স্বর্ণালংকারই কি টার্গেট?

স্থানীয়রা জানান, মিজানুর রহমান সম্প্রতি ছেলের বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে উপলক্ষে কিছুদিন আগে প্রায় ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ক্রয় করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেই স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকার লোভেই দুর্বৃত্তরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে ঘরে প্রবেশ করে।
কিন্তু ঘরে থাকা মা ও মেয়ে বাধা দিলে, দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে তাদের হত্যা করে।

এক প্রতিবেশী আবেগভরে বলেন, “আমরা এমন ভয়াবহ দৃশ্য জীবনে দেখিনি। মা-মেয়েকে যেভাবে কেটে হত্যা করা হয়েছে, তা কোনো মানুষ করতে পারে না। দোষীদের ফাঁসি চাই।”

“ডাকাতি নাকি অন্য কারণ, তদন্ত চলছে”— পুলিশ

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বলেন, “প্রাথমিকভাবে এটি ডাকাতির ঘটনা মনে হচ্ছে। তবে পারিবারিক শত্রুতা বা অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না—তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমরা হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।”

শোকাবহ গ্রাম, স্তব্ধ জনপদ

মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডে চন্ডিপুর গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। নিহত তানহা আক্তার মীম স্থানীয় এক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রাণবন্ত মেয়েটির এমন নির্মম মৃত্যুতে স্তব্ধ সহপাঠী ও শিক্ষকরা।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত তদন্ত শেষ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে, যারা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে।


🔹 লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জনপদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করেছে। মানবতার এই ভয়াবহ লঙ্ঘনের বিচার চায় পুরো চন্ডিপুরবাসী।