Home আন্তর্জাতিক কারাগারে ‘সেক্সরুম’; লক্ষ্য মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ও পারিবারিক বন্ধন জোরদার

কারাগারে ‘সেক্সরুম’; লক্ষ্য মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ও পারিবারিক বন্ধন জোরদার

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইতালির একটি কারাগারে চালু করা হয়েছে ইউরোপের অন্যতম আলোচিত উদ্যোগ‘সেক্সরুম’ বা ঘনিষ্ঠ সাক্ষাৎ কক্ষ। এর মাধ্যমে বন্দিরা তাঁদের স্বামী–স্ত্রী বা সঙ্গীর সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গোপনে দেখা করতে পারবেন। মানবাধিকার ও বন্দিদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতালির এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
🔹 মানবাধিকার আদালতের রায়ের পর নতুন নীতি

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইতালির সংবিধান আদালত কারাগার আইন সংস্কার করে রায় দেন—বন্দিদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের অধিকার সংবিধানসিদ্ধ। সেই রায়ের ভিত্তিতেই ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে দেশটির একটি কারাগারে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে প্রথম ‘intimate meeting room’ বা ‘সেক্সরুম’।
রুমটিতে রয়েছে একটি বিছানা, শৌচাগার ও সীমিত গোপনীয়তার সুযোগ। প্রতি মাসে একজন বন্দী সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে সেখানে থাকতে পারবেন। কারাগারের নিরাপত্তা রক্ষায় রুমের বাইরে থাকবেন একজন প্রহরী, তবে কোনো ধরনের ভিডিও বা অডিও নজরদারি থাকবে না।

🔹 পুনর্বাসন ও মানসিক স্বাস্থ্যের অংশ

ইতালির বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য বন্দিদের মানসিক স্বস্তি বৃদ্ধি ও সামাজিক পুনঃএকীভূতকরণে সহায়তা করা।
অনেক বন্দী দীর্ঘমেয়াদে পারিবারিক বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় বিষণ্নতা ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। ঘনিষ্ঠ সাক্ষাতের এই সুযোগ তাঁদের মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং কারাগার-পরবর্তী জীবনে সমাজে ফিরে যেতে সহায়ক হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

ইতালির মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই সিদ্ধান্তকে “প্রগতিশীল ও মানবিক” হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি বন্দিদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।
🔹 নিরাপত্তা ও নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক

তবে সমালোচকরা বলছেন, এমন উদ্যোগ নিরাপত্তা ঝুঁকি ও প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই কক্ষগুলো মাদক বা নিষিদ্ধ সামগ্রী পাচারের নতুন পথ খুলে দিতে পারে। আবার অনেকের মতে, এটি সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিতর্কিত পদক্ষেপ।
তবে সরকার বলেছে, কঠোর পর্যবেক্ষণ ও নিয়মের মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।

🔹 ইউরোপে নজির

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আগে থেকেই সীমিতভাবে ‘conjugal visit’ বা দাম্পত্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা রয়েছে—যেমন স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানিতে।
ইতালিতে এ ধরনের নীতি প্রথমবার কার্যকর হওয়ায় এটি দক্ষিণ ইউরোপে এক নতুন নজির স্থাপন করেছে।
দীর্ঘমেয়াদে সফল হলে দেশটির অন্যান্য কারাগারেও একই ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

মানবাধিকার ও পুনর্বাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। তবে বাস্তব প্রয়োগে নিরাপত্তা ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া কেমন হয়—সেটিই এখন দেখার বিষয়।
ইতালির এই “সেক্সরুম” ব্যবস্থা হয়তো ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী কারাগার ব্যবস্থাপনার নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।