বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণ এখন এক নীরব ঘাতক। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ফুসফুস নয়, হৃদযন্ত্রও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দূষিত বায়ুর প্রভাবে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণ হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ অকালমৃত্যুবরণ করে বায়ুদূষণজনিত কারণে, যার একটি বড় অংশই হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের শিকার। বায়ুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা (PM2.5 ও PM10) রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে রক্তনালী সংকুচিত করে এবং হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে হঠাৎ হৃদরোগের আক্রমণ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঢাকায় বায়ুদূষণ ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ’
বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ রাজধানী ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ু মান পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ার (IQAir)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণার মাত্রা WHO-এর নির্ধারিত নিরাপদ সীমার ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি।
বছরের শীতকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়— কারণ তখন ধোঁয়া, ধূলা ও যানবাহনের ধোঁয়া মিলিত হয়ে ঘন ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে। এতে শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগীদের অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে।
চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা
বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “বায়ুদূষণ এখন শুধু পরিবেশগত নয়, এটা একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাকের হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো দীর্ঘ সময় দূষিত বায়ুতে বসবাস করা।”
তিনি আরও বলেন, দূষিত বায়ুতে থাকা সূক্ষ্ম কণাগুলো শরীরের কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়, যা ধীরে ধীরে হৃদপিণ্ডের পেশিকে দুর্বল করে এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে।
কী করা যেতে পারে
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন,
সকাল ও রাতে ধোঁয়াশার সময় খোলা জায়গায় ব্যায়াম বা হাঁটা এড়িয়ে চলতে,
বাড়ি ও অফিসে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে,
বাইরে বের হলে মাস্ক (বিশেষ করে N95) পরতে,
এবং শহরে সবুজ এলাকা ও গাছপালা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে।
সরকারের উদ্যোগ
পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে ক্লিন ইট প্রকল্প, পুরনো যানবাহন অপসারণ ও নির্মাণকাজে ধূলা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজে নয়, বাস্তবে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে হার্ট অ্যাটাকসহ নানা প্রাণঘাতী রোগ আরও বেড়ে যাবে।
বায়ুদূষণ এখন আর শুধুমাত্র পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি সরাসরি মানবস্বাস্থ্যের ওপর আঘাত হানছে। বিশেষ করে ঢাকাবাসীর জন্য এটি এক নীরব বিপর্যয়। সময় এসেছে, ব্যক্তিগত সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ একসঙ্গে এগিয়ে এনে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে— না হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।