Home First Lead ট্যারিফ প্রত্যাহারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, আইনি পদক্ষেপে যাচ্ছে মেরিটাইম ল সোসাইটি

ট্যারিফ প্রত্যাহারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, আইনি পদক্ষেপে যাচ্ছে মেরিটাইম ল সোসাইটি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা:  চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবার মাশুল অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি নিয়ে শুরু থেকে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে। তবে, সেটা সীমিতি ছিল চিঠি চালাচালির মধ্যে। চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গত শনিবার প্রথমবারের মত হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতে প্রথমবারের মত প্রতিবাদ সভা হয়। শিল্পপতি মোহাম্মদ আমিরুল হক এবং এশিয়ান গ্রুপের কর্ণধার এম এ সালামসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বর্ধিতহারে ট্যরিফ কার্যকর করার সার্কুলার অবিলম্বে প্রত্যাহারের ব্যাপারে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের তীব্র অসন্তোষের পর এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ মেরিটাইম ল সোসাইটি (বিএমএলএস)। সংগঠনটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বর্ধিত শুল্ক সংক্রান্ত সার্কুলার প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে সরকারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।

মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির

মঙ্গলবার সোসাইটির সভাপতি মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির স্বাক্ষরিত এক নোটিশ অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।

নোটিশে বলা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারি করা এবং ১৪ সেপ্টেম্বর সরকারি গেজেটে প্রকাশিত এসআরও নং ৩৬৪-আইন/২০২৫ অনুযায়ী বন্দর সেবার ওপর আরোপিত বর্ধিত শুল্ক অবিলম্বে বাতিল, প্রত্যাহার ও স্থগিত করতে হবে। অন্যথায় জনস্বার্থে আদালতে মামলা করা হবে।

বিএমএলএস জানায়, এই শুল্ক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও স্থানীয় শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন কাঠামো অনুসারে বিশ ফুট সমমানের একটি কন্টেইনারের চার্জ ১১,৮৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৬,২৪৩ টাকায় পৌঁছেছে—অর্থাৎ প্রতিটি কন্টেইনারে গড়ে ৪,৩৯৫ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। আমদানি কন্টেইনারের ফি ৫,৭২০ এবং রপ্তানি কন্টেইনারের ফি ৩,০৪৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া জাহাজ থেকে কন্টেইনার লোড-আনলোডের ট্যারিফ ৪৩.৪০ মার্কিন ডলার থেকে ৬৮ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে, যা প্রায় তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয়।

সোসাইটি অভিযোগ করেছে, এই শুল্ক বৃদ্ধির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এম/এস ইডিয়ম, কনসালটিং, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেকচার, স্পেন জেভি এবং তাদের স্থানীয় অংশীদার এম/এস লজিকফর্ম লিমিটেডের বন্দর পরিচালনা বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। লজিকফর্ম ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের নিবন্ধিত উদ্দেশ্যে বন্দর ব্যবস্থাপনা বা পরামর্শসেবা অন্তর্ভুক্ত নয়—যা পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

বিএমএলএসের মতে, শুল্ক বৃদ্ধি দেশের শিল্প উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে এবং রপ্তানিকারকরা বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন। সোসাইটির দাবি, ১৯০৮ সালের পোর্ট অ্যাক্টের ৩৩(৫) ধারা অনুযায়ী, কোনো শুল্ক বৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার জন্য গেজেট প্রকাশের অন্তত ৬০ দিন পর কার্যকর হতে হয়। কিন্তু ১৪ সেপ্টেম্বর গেজেটে প্রকাশিত সার্কুলারটি ১৪ অক্টোবর থেকেই কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা আইনের লঙ্ঘন এবং সম্পূর্ণ অবৈধ।

সংগঠনটি প্রস্তাব করেছে, সরকারের উচিত বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করে শুল্ক কাঠামো ও কার্যকারিতা পুনর্বিবেচনা করা।

বিএমএলএসের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সার্কুলার প্রত্যাহার না হলে সংস্থা জনস্বার্থে আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হবে।