আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বন্যপ্রাণী পাচারের কেন্দ্র হিসেবে দ্রুত আলোচনায় এসেছে থাইল্যান্ড। আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ সংস্থা ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, দেশটির সীমান্ত, বিমানবন্দর এবং অনলাইন বাজারগুলো এখন আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণ বাণিজ্য নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, থাইল্যান্ডের সহজ ও সাশ্রয়ী বিমানসংযোগ পাচারকারীদের জন্য পরিস্থিতিকে অনুকূল করেছে। ব্যাংককসহ বিভিন্ন শহর থেকে সরাসরি ফ্লাইটের মাধ্যমে বিরল প্রজাতির পাখি, কচ্ছপ, বানর, এমনকি ছোট আকৃতির বাঘশাবক পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে পাচার হচ্ছে। অনেকে এসব প্রাণীকে ‘এক্সোটিক পেট’ হিসেবে অনলাইনে বিক্রির জন্য তুলে দেয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে।
আংশিকভাবে বৈধ স্থানীয় বন্যপ্রাণী বাণিজ্য আইন পাচারকারীদের আরেকটি আশ্রয় দিয়েছে। কিছু প্রজাতি স্থানীয়ভাবে বাণিজ্যযোগ্য হলেও আন্তর্জাতিকভাবে সেগুলো বিপন্ন তালিকাভুক্ত। এই আইনি ফাঁক ব্যবহার করেই পাচারকারীরা বন্যপ্রাণের উৎস লুকিয়ে বৈধ চালানের সঙ্গে অবৈধ প্রজাতি পাঠিয়ে দিচ্ছে বিদেশে।
সম্প্রতি থাই কর্তৃপক্ষ ব্যাংককের বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি স্যুটকেস থেকে বিপন্ন লেমুর, রেড-ফুটেড টর্টয়েস এবং শিশুপাখি উদ্ধার করেছে। তদন্তে জানা যায়, প্রাণীগুলো দক্ষিণ এশিয়ার এক ক্রেতার উদ্দেশে পাঠানো হচ্ছিল।
আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ সংস্থা ‘ট্র্যাফিক’ জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিদেশি প্রজাতির প্রাণীর চাহিদা বেড়েছে। দেশটিতে এখন এমন বহু ‘ব্রিডিং ফার্ম’ গড়ে উঠেছে, যারা আংশিকভাবে নিবন্ধিত বা সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত। এদের অনেকেই পাচার নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থনীতির দিক থেকে এই অবৈধ বাণিজ্য অজস্র অর্থ প্রবাহের পথ খুলে দিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে বন্যপ্রাণ বাণিজ্যের বার্ষিক আকার আনুমানিক ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বলে বিভিন্ন সংস্থার হিসাব। এর উল্লেখযোগ্য অংশ থাইল্যান্ড হয়ে অন্য দেশে যায়।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এই প্রবণতা শুধু প্রজাতি ধ্বংস করছে না, বরং মানবস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি করছে। অবৈধভাবে পরিবহিত প্রাণীর মাধ্যমে নতুন রোগের সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা বাড়ছে।
থাইল্যান্ডের বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে, তারা এখন বিমানবন্দর ও বন্দরগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা হচ্ছে। তবে এনজিওগুলো বলছে, আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পর্যবেক্ষণের ঘাটতি এখনো বড় দুর্বলতা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মতো থাইল্যান্ডেও বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের জটিল বাস্তবতা হলো—একদিকে বৈধ বাজার, অন্যদিকে লুকিয়ে থাকা বিশাল কালোবাজার। এই দুইয়ের সীমারেখা যতক্ষণ অস্পষ্ট থাকবে, ততক্ষণ থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের কাছে আকর্ষণীয় কেন্দ্র হিসেবেই থাকবে।